বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জীবননাশের শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মৃত্যুকে ভয় করেন না তিনি, তবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলা থেকে কখনোই পিছু হটবেন না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তেজনা যখন ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে, তখন আবারও আলোচনায় উঠে এলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং দলটির অন্যতম আলোচিত নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তিনি নিজের ও পরিবারের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর শঙ্কা প্রকাশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী ও সন্তান উপস্থিত ছিলেন, যা তার বক্তব্যকে আরও আবেগপ্রবণ ও বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে আসে।
ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষকে জানাতে চাই আমার জীবন এখন গুরুতর ঝুঁকির মধ্যে আছে। আমি আমার নিজের মৃত্যুকে ভয় করি না, কিন্তু আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। মৃত্যুকে আমি কখনো ভয় করিনি, তবে অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বড় লজ্জাজনক ব্যাপার।” তার কণ্ঠে স্পষ্ট হয়ে ওঠে একদিকে আশঙ্কা, অন্যদিকে অদম্য সাহসিকতা।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান বলেন, তিনি কখনো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কাছে মাথানত করেননি এবং ভবিষ্যতেও করবেন না। তার ভাষায়, “আমি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বলেছি, বলছি, আর বলে যাবো। আমার কথায় যদি কেউ আহত হয় বা অসম্মানিত বোধ করে, তারা রাজনৈতিকভাবে জবাব দিক। চাইলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে, আদালতে দাঁড়িয়ে আমি জবাব দেবো। কিন্তু এ কারণে আমার বা আমার পরিবারের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বাসার সামনে মব জড়ো করা বা ভয় দেখানো রাজনীতির অংশ হতে পারে না। এটা শুধু অগণতান্ত্রিকই নয়, বরং মানবাধিকারের জন্যও হুমকিস্বরূপ।” তার মতে, রাজনীতিতে মতবিরোধ স্বাভাবিক, কিন্তু হত্যা কিংবা ভীতি প্রদর্শন সেই সীমা অতিক্রম করে যায়।
নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান জানান, তিনি ইতোমধ্যেই মানসিকভাবে প্রস্তুত যে যেকোনো মুহূর্তে তার জীবনের ওপর হামলা হতে পারে। তবে তবুও তিনি কোনো জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করবেন না। তার যুক্তি, “যদি ছাত্ররা বা যুবকরা মনে করে আমি অপরাধ করেছি, তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা করুক। আমাকে আদালতে পাঠাক, চাইলে কারাগারে রাখুক। কিন্তু আমাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে লাভ নেই।”
এসময় সাংবাদিকরা তাকে ৫ আগস্টের একটি অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।” তার এই বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে নানা ব্যাখ্যা ও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংকট নয়, বরং দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দলীয় অভ্যন্তরীণ চাপেরও প্রতিফলন। তিনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত-শিবিরের সমালোচনায় বরাবরই সরব, আর সে কারণেই তার বিরুদ্ধে একাধিক পক্ষ ক্ষুব্ধ। তার প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে আবারও পরিষ্কার হলো, তিনি নিজের অবস্থান থেকে একচুলও সরবেন না।
এই সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম নিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ফজলুর রহমানের মতো নেতারা যখন মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে জনগণের সামনে দৃঢ় অবস্থান নেন, তখন দেশের গণতান্ত্রিক লড়াই এক নতুন মাত্রা পায়। তবে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন রাষ্ট্রের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।