বিএনপির শোকজ নোটিশ পাওয়ার পরও ফজলুর রহমান দৃঢ় অবস্থান নিয়ে বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধার মানুষ এবং জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান করা দল। তার বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে উত্তাল আলোচনা শুরু হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোমবার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে পাঠানো শোকজ নোটিশ তিনি হাতে পেয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, "রাত ৯টার দিকে দলীয় চিঠি হাতে পেয়েছি। দল আমার কিছু বক্তব্যের ওপর আপত্তি জানিয়েছে এবং এজন্যই এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এর উত্তর দেব।
ফজলুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, "আমার বাসার নিচে সকাল থেকে কিছু ছেলে-মেয়ে ভিড় করছে। সংখ্যায় সাত-আটজন হবে। তারা মব সৃষ্টি করে আমাকে হুমকি দিচ্ছে, হত্যাচেষ্টার মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "আমি মুক্তিযোদ্ধার মানুষ। আর জামায়াত এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল।
তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। কারণ, বিএনপির ভেতর থেকে বহুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছে যে, তিনি গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন।
এর আগে রোববার রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ওই নোটিশে তাকে জানানো হয়, জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তিনি ধারাবাহিকভাবে কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন। এসব বক্তব্য শহীদদের আত্মত্যাগকে অমর্যাদা করছে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নোটিশে আরও বলা হয়, গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির সাড়ে চারশ’ নেতাকর্মীসহ ছাত্র-জনতার প্রায় দেড় হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ৩০ হাজারেরও অধিক আহত হয়েছেন। অথচ ফজলুর রহমান তাদের অবদান ও আত্মত্যাগ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করছেন, যা শুধু দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে না বরং জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতেও আঘাত হানছে।
বিএনপির নোটিশে কড়া ভাষায় উল্লেখ করা হয়, ফজলুর রহমানের এসব বক্তব্যকে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক চক্রান্ত হিসেবে অনেকেই মনে করছে। তিনি ক্রমাগত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। এজন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব জমা দিতে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ফজলুর রহমানের বক্তব্য বিএনপির জন্য বড় ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে যখন দলটি নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কৌশল সাজাচ্ছে, তখন ভেতর থেকে আসা এমন বক্তব্যে দলের ঐক্য ও ইমেজ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
অন্যদিকে ফজলুর রহমানের সমর্থকরা বলছেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং সত্য উচ্চারণ করায় তাকে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, তাকে মব দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এখন রাজনৈতিক মহলে দৃষ্টি BNP’র পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কতটা কঠোর হয়, নাকি আপসের পথে যায়—তা সময়ই বলে দেবে।