প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, তার জীবনের মূল লক্ষ্য এখন আখেরাতের প্রস্তুতি নেওয়া, আর এরপর মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আবারো আলোচনায় এসেছেন তার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ঘিরে। এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তিনি বলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার অগ্রাধিকার এখন আর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নয়; বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আখেরাতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাই তার মূল লক্ষ্য। বাবরের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পৃথিবীর সব অর্জনই ক্ষণস্থায়ী, তাই প্রকৃত প্রস্তুতি নিতে হবে মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য।
লুৎফুজ্জামান বাবর দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এক সময় ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেছেন এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি এখন ব্যক্তিগত জীবন, ধর্মীয় চর্চা এবং সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
তার ভাষ্য, “মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মৃত্যুর পরের জীবনের জন্য প্রস্তুত হওয়া সবচেয়ে জরুরি। আমি এখন সেই দিকেই মনোযোগ দিচ্ছি। তবে সুযোগ পেলে মানুষের কল্যাণেও কাজ করতে চাই, কারণ সমাজের জন্য কিছু রেখে যাওয়া ঈমানের অংশ।”
বাবরের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে ধর্মীয় বই পড়া, নামাজ-কালাম ও দোয়া-দরুদে সময় কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্র মানুষের সহায়তায় ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছেন। তার মতে, মানুষ যদি সামর্থ্যের মধ্যে অন্যের জন্য কিছু করতে পারে, তাহলে সেটিই সবচেয়ে বড় সেবার কাজ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাবরের এই বক্তব্য কেবল তার ব্যক্তিগত মনোভাবের প্রকাশ নয়, বরং একটি বার্তা। অতীতে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং রাজনৈতিক জীবনের নানা সমালোচনার মুখে পড়া বাবর হয়তো এখন আত্মশুদ্ধি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতার পথে হাঁটতে চান। আখেরাতের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তার জীবনদর্শনে এখন বড় পরিবর্তন এসেছে।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বাবরের এই বক্তব্যকে ভিন্নভাবে দেখছেন। অনেকেই বলছেন, দেশের রাজনীতিবিদদের যদি সত্যিই এভাবে আত্মসমালোচনার মানসিকতা তৈরি হয়, তাহলে সমাজ অনেকাংশে উপকৃত হবে। তবে একইসাথে প্রশ্ন উঠছে, বাবরের এই নতুন অঙ্গীকার কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে এবং তিনি আদৌ জনসেবামূলক কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারবেন কি না।
বাবর নিজে অবশ্য আশাবাদী। তার ভাষায়, “মানুষের কল্যাণে কাজ করার দরজা সব সময় খোলা। ক্ষমতায় থাকলে যেমন করা যায়, তেমনি ব্যক্তিগত অবস্থান থেকেও সমাজের জন্য অনেক কিছু করা সম্ভব। আমি চাই আমার জীবনের বাকি সময়টা সমাজ, মানুষ এবং দেশের কাজে ব্যয় করতে।”
তার এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি রাজনৈতিক অঙ্গন ও জনমনে কৌতূহল তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি হয়তো এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে রাজনীতির বাইরে থেকেও একজন সাবেক মন্ত্রী মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাইছেন।