যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব ফেসবুকে এক পোস্টে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে তিন ধরণের ‘শেখ মুজিব’ রয়েছেন—নায়ক, একনায়ক ও ফ্যাসিস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে এক অভূতপূর্ব মন্তব্য করেছেন। বুধবার (১৪ আগস্ট) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তিনি লেখেন—বাংলাদেশে আসলে “তিনজন শেখ মুজিব” আছেন, এবং এই তিনটি পরিচয় দেশের ইতিহাস ও রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
ড. গালিবের ভাষ্যমতে, প্রথম শেখ মুজিব হলেন মুক্তিযুদ্ধের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামে অনন্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম স্থপতি, যিনি লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা ছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মে অপরিসীম অবদান রেখেছেন।
দ্বিতীয় শেখ মুজিবকে তিনি আখ্যা দেন ‘একনায়ক শেখ মুজিব’। তার মতে, স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনী গঠন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা চালু হয়। এই পদক্ষেপগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন গালিব, এবং উল্লেখ করেন—বাংলাদেশের প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ মুজিবই গণতন্ত্র হত্যার সূচনা করেছিলেন।
তৃতীয় পরিচয়টি হলো ‘ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিব’। গালিবের দাবি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ১৫ বছরে একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ও ‘চেতনা শিল্প’ ব্যবহার করে ক্ষমতার ফ্যাসিস্ট কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। তার মতে, হাসিনার এই শাসনব্যবস্থা ইতিহাসে শেখ মুজিবের একটি নতুন ‘ফ্যাসিস্ট রূপ’ তৈরি করেছে।
পোস্টে ড. গালিব আরও লেখেন, “ছাত্র-জনতা আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙেছে। আমাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব হলো—এই প্রতীকগুলো ভেঙে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা।”
তিনি বলেন, আগস্ট মাসে একনায়ক শেখ মুজিবের পতন উদযাপন করাও প্রয়োজন, তবে ১৫ আগস্টের বেদনার দিনে শহীদ পরিবারের প্রতি সংবেদনশীল থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু কিভাবে নায়ক থেকে একনায়কে পরিণত হলেন এবং পতনের পথে হাঁটলেন, সেই ইতিহাস চর্চা না করলে বাংলাদেশ কখনোই প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারবে না।
ড. গালিবের মতে, এই ইতিহাস চর্চার অভাব এবং মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটির নীরবতা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী শাসন কায়েমের সুযোগ দিয়েছে। তবুও, তিনি স্পষ্ট করে বলেন—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে শ্রদ্ধার সঙ্গে বেঁচে থাকবেন, দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্মরণীয় থাকবেন।
তার ভাষায়, “আমরা ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর শ্রদ্ধার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করব। কিন্তু আগস্টে আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য হলো শেখা, কিভাবে স্বাধীনতার নায়কের পতন ঘটে এবং সেই পতনের সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের জন্ম হয়।”
ড. গালিবের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সমর্থকরা একে সাহসী ও প্রয়োজনীয় সত্য বলা বলে অভিহিত করছেন, আর সমালোচকরা বলছেন—এটি ইতিহাসের প্রতি অবমাননা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাই হোক, এই মন্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এবং স্বাধীনতার ইতিহাস ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে অনেককে।