আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণার পরও রাজপথ থেকে পিছু হটেননি জুলাই আন্দোলনে আহতরা। রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ মোড় অবরোধ করে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি একটাই—আওয়ামী লীগকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
তাদের তিন দফা প্রধান দাবি হচ্ছে:
১. আওয়ামী লীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা
২. জুলাই সনদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি
৩. আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার পূর্ণ সরকারি ব্যয়ভার গ্রহণ
শনিবার রাতেই সরকার থেকে ঘোষণা আসে যে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এই ঘোষণাকে কেউ কেউ সরকারের নমনীয়তা হিসেবে দেখলেও, আন্দোলনকারী আহতদের মতে এটি পর্যাপ্ত নয়।
শাহবাগে অবস্থানকারী এক আন্দোলনকারী বলেন,
“স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগকে সাময়িক নয়, স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দল ইতিহাসের দায়ে দাগি অপরাধী। আমরা ঘরে ফিরব না, যতক্ষণ না এই দাবির নিশ্চয়তা পাই।”
তারা আরও অভিযোগ করেন, গেল ৩ জুলাইয়ের সহিংস হামলায় যারা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসা এখনো নিশ্চিত হয়নি। বহু আহত ব্যক্তি এখনো শারীরিক ও মানসিক দুর্ভোগে আছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার এই ঘটনার দায় এড়াতে পারবে না।
রাজপথে তীব্র যানজট, দুর্ভোগে নগরবাসী
আন্দোলনকারীদের অবস্থানের ফলে শাহবাগ, টিএসসি, বাংলামোটর, কাঁটাবনসহ আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা সড়কে আটকে থাকেন।
অনেকের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“দাবি যাই হোক, এই ধরনের আন্দোলনের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।”
তবে আন্দোলনকারীরা পাল্টা যুক্তিতে বলেন,
“এ লড়াই আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। আমরা আত্মত্যাগ করেছি, পিছু হটব না। শাহবাগ থেকে সারাদেশে আহতদের একত্রিত হতে হবে।”
আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?
সরকার পক্ষ থেকে এখনো নতুন কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এনসিপিসহ অন্যান্য মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো শনিবার রাতেই আন্দোলন স্থগিত করলেও শাহবাগে এখনো প্রতিদিন জমায়েত বাড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
এই পরিস্থিতি সরকার ও প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার তাগিদ, অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের দৃঢ় অবস্থান—এই দুইয়ের মাঝে কৌশলী সমাধান এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আন্দোলন থামাতে পারেনি। রাজপথে থাকা আহতরা বলছেন, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা না পাওয়া পর্যন্ত তারা পিছু হটবেন না। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।