close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আলফাডাঙ্গায় বিএনপির কমিটিতে আ’লীগ নেতাদের স্থান, প্রতিবাদে পদবঞ্চিতরা..

Md. Imran Molla avatar   
Md. Imran Molla
মো. ইমরান মোল্যা, ফরিদপুর:

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিএনপির নবগঠিত উপজেলা ও পৌর কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছে পদবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন দলীয় আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী একাধিক নেতাকর্মীকে নবগঠিত কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা রবিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

 

বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে পৌরসদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল বের করে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।

 

জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর রাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপনের স্বাক্ষরে আলফাডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর বিএনপির পৃথক ১০১ সদস্যবিশিষ্ট দুটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবঘোষিত কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাধিক নেতা পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

 

নবঘোষিত উপজেলা বিএনপি কমিটির ১১ নম্বর সহসভাপতি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও ২০২১ সালে নৌকা প্রতীকে টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামানকে। একই কমিটিতে ৫ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল ওহাব ওরফে পান্নু এবং ৪ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সহসাধারণ সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন মনিরুজ্জামান, যিনি বিগত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সহসাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে গোপালপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওহিদ শিকদারকে এবং সহ-সমবায়বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. জাকারকে। কমিটির সদস্য (ক্রমিক ৯৮) হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার শ্যালক নুরুল ইসলামকে।

 

পৌর বিএনপির নবঘোষিত ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতেও আওয়ামী লীগ ঘরানার একাধিক নেতাকে স্থান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি কামরুজ্জামান কদরকে পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে বলে জানা যায়। এসব ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী পদবঞ্চিত বিএনপি নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, “যারা বিএনপির দুর্দিনে দলের পাশে থেকে আন্দোলন চালিয়েছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী ব্যক্তিদের কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে। এটি বিএনপিকে দুর্বল করার একটি ষড়যন্ত্র।” তারা অভিযোগ করেন, “খন্দকার নাসিরুল ইসলাম অর্থের বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পদ দিয়েছেন। তিনি দলকে বিক্রি করে দিয়েছেন।” বক্তারা নবগঠিত উপজেলা ও পৌর বিএনপি কমিটি বাতিল করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এই কমিটি বাতিল না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”

 

উল্লেখ্য, ফরিদপুর-১ আসন (বোয়ালমারী, মধুখালী ও আলফাডাঙ্গা) বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে দুটি গ্রুপের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং অপরটি নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা কেন্দ্রীয় নেতা ও ফরিদপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। নবগঠিত কমিটিতে সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের ত্যাগী নেতাদের বাদ দেওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

 

বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম দাউদ ও নজরুল ইসলাম, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ইয়াদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এম এ আজিজ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান খান ইয়ানুর, উপজেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আলামিন ইসলাম নাজমুল ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মুসা প্রমুখ।

Inga kommentarer hittades


News Card Generator