শরীয়তপুরের জাজিরায় আজানের শব্দ নিয়ে বিরোধের জেরে বিএনপি নেতা খবির সরদারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা আলমাছ সরদার ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শরীয়তপুরের জাজিরায় আজানের শব্দকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় কৃষকদল নেতা ও বিএনপির সক্রিয় কর্মী খবির সরদার (৫৫) কে কুপিয়ে হত্যা করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের বড়কান্দি ইউনিয়ন শাখার নেতা আলমাছ সরদার (৩০) ও তার সহযোগীরা। এই হত্যাকাণ্ডে এলাকা জুড়ে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে বড়কান্দি ইউনিয়নের নয়াবাজার সংলগ্ন ওমরদি মাদবরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত খবির সরদার স্থানীয় ইউনুস সরদারের ছেলে এবং ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন। দীর্ঘদিন ঢাকায় সিএনজি চালানোর পর তিনি নিজ গ্রামে ফিরে কৃষি কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওমরদি মাদবরকান্দি গ্রামের সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম প্রতিদিন ফজরের নামাজ শেষে মুসল্লিদের ডাকাডাকি ও ওয়াজ-নসিহত করতেন। এ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আলমাছ সরদার বিরক্ত হয়ে ওঠেন এবং দুদিন আগে ইমামের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার সময় কৃষকদল নেতা খবির সরদার ইমামের পক্ষে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলে আলমাছ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে হুমকি দেন।
পরবর্তীতে গত রবিবার মসজিদের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন সরদার বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু অভিযোগের তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার রাতে বড় ভাইয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে খবির সরদারের ওপর আলমাছ সরদার ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তারা তাকে গুরুতর আহত করে পুকুরে ফেলে পালিয়ে যায়।
পরিবারের সদস্যরা দ্রুত খবির সরদারকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
নিহতের বড় ভাই দানেশ সরদার অভিযোগ করে বলেন, “মসজিদের ইমামের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছিল আলমাছ। আমার ভাই প্রতিবাদ করায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রেখে গেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।”
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল ইসলাম জানান, “নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় মানুষরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। অনেকেই বলছেন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক শান্তিকে কেন্দ্র করে যে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে তা এখন হত্যার পর্যায়ে পৌঁছানো অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এদিকে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এই হত্যার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছে, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার সংস্কৃতি দিন দিন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষও এ ধরনের ঘটনাকে সামাজিক অস্থিরতার জন্য দায়ী করছে।
বর্তমানে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের পর গ্রামজুড়ে শোক ও আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে।