close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

আজ ৮১ বছরে পা রাখলেন খালেদা জিয়া

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
Today marks the 81st birthday of BNP Chairperson Begum Khaleda Zia, a symbol of unwavering democratic leadership in Bangladesh, who has faced imprisonment, conspiracies, and political persecution thro..

আজ ৮১ বছরে পদার্পণ করলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক জীবনে বারবার বন্দিদশা, ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন মোকাবিলা করেও তিনি হয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে আপসহীন গণতান্ত্রিক নেত্রীর প্রতীক।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যে ক’জন নেতা বা নেত্রীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানটি অধিকার করে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ ১৫ আগস্ট, এই আপসহীন নেত্রীর ৮১তম জন্মদিন। এ বছর তার জন্মদিন এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দীর্ঘ রাজনৈতিক রেষারেষি ও অন্যায় কারাবাস শেষে তিনি মুক্ত জীবন ফিরে পেয়েছেন। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ পেয়েছে স্বস্তির নিঃশ্বাস, আর খালেদা জিয়া ফিরে পেয়েছেন স্বাধীন চলার পথ।

১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তি শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অল্প সময় পরের এক শরতের সকালে জন্ম নেওয়া এই কন্যাশিশুর নাম রাখা হয় ‘শান্তি’। পরে তার বোনের দেয়া ডাকনাম ‘পুতুল’ নামেই তিনি পরিচিত হন। শৈশবে দিনাজপুরে বেড়ে ওঠা খালেদা জিয়া ১৯৬০ সালে দিনাজপুর সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যান। কলেজ জীবনে তার পরিচয় হয় তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সাথে, যার সাথে ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়েই তার বিয়ে হয়।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খালেদা জিয়া ছিলেন চট্টগ্রামে। মুক্তিকামী স্বামীর বিদ্রোহী ঘোষণা ও যুদ্ধের অস্থিরতার মধ্যে তিনি সন্তানদের নিয়ে আত্মগোপনে থাকেন। পরে পাক সেনাদের হাতে বন্দি হন এবং দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার আনন্দের সাথে মুক্তি পান।

স্বামী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩১ মে আততায়ীর হাতে নিহত হলে, একেবারে সাধারণ গৃহবধূ থেকে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করে ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন এবং তিনবার সর্বাধিক ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

তার রাজনৈতিক জীবন সবসময় ছিল প্রতিকূলতায় ভরা। ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় সেনানিয়ন্ত্রিত প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করে সাব-জেলে পাঠায়। দীর্ঘদিন কারাবাস, পরিবারে ওপর নির্যাতন এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েও খালেদা জিয়া তার অবস্থান থেকে সরে আসেননি। ২০১৮ সালে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বিতর্কিত আদালতের রায়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় তাকে আবারও কারাবন্দি করা হয়। দীর্ঘ জেলজীবনে চিকিৎসাবঞ্চনার শিকার হন তিনি, এমনকি বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগও পাননি।

অবশেষে ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। দীর্ঘ কারাবাস ও অসুস্থতার পরও তিনি আজও দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করছেন।

তার ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের কেক কাটা বা আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার নয়াপল্টনে বেলা ১১টায় আয়োজিত দোয়া মাহফিলে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। মিলাদে ১৯৭১ সালের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা, ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হবে।

বেগম খালেদা জিয়ার ৮১ বছরের জীবন সংগ্রাম, সাহস ও ত্যাগ আজও লাখো মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। তার রাজনৈতিক যাত্রা প্রমাণ করেছে, দৃঢ় বিশ্বাস ও আপসহীন মনোভাব নিয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। আজ তার জন্মদিনে দেশজুড়ে লাখো মানুষ প্রার্থনা করছেন, যেন তিনি সুস্থ থাকেন এবং দেশের গণতন্ত্রের জন্য তার লড়াই অব্যাহত রাখতে পারেন।

 

No comments found