ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন—আগের মতো প্রশাসননির্ভর বা সমঝোতার নির্বাচনের ফাঁদে তারা পা দেবেন না। জনগণের সামনে প্রকৃত বিকল্প থাকতে হবে বলেই তিনি দাবি করেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, “আগের মতো ওসি কিংবা প্রশাসননির্ভর নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না, আমরাও তা চাই না। এবার হতে হবে প্রকৃত গণপরিষদ নির্বাচন।”
শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচন মানেই হবে মধ্যরাতের ভোটের পুনরাবৃত্তি। জনগণের আস্থা নিয়ে সামনে এগোতে চাই আমরা। জনগণের সামনে প্রকৃত বিকল্প থাকতে হবে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, “আমাদের আসন সমঝোতার লোভ দেখিয়ে কেনা যাবে না। আমরা বিক্রি হতে আসিনি। নতুন বাংলাদেশ গড়াই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের আস্থা থাকলেই আমরা টিকে থাকব।”
তিনি রাজনৈতিক বাস্তবতার উদাহরণ টেনে বলেন, আগে ধানমন্ডি ৩২ ও গুলিস্তানে লাইন ধরেই ক্ষমতার ভাগাভাগি হতো। পরে গুলশান ও পল্টনে গিয়ে সেই লাইন ধরা শুরু হয়। এসব ‘লাইন ধরার রাজনীতি’ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য সুখকর নয়, আবার আওয়ামী লীগের জন্যও লাভজনক হয়নি। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আপনি যদি মনে করেন পুরোনো ভুল নিয়েই নতুন রাষ্ট্র গঠনের দিকে যাবেন, তবে পাঁচ বছর পর না হোক, দশ বছর পর আবার গণপ্রতিরোধের মুখে পড়বেন।”
বিভিন্ন মহল থেকে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে এনসিপির এ নেতা কঠোরভাবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, “কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি বা আমার সহযোদ্ধারা এক টাকার দুর্নীতিতেও জড়িত, তবে আমি আজই রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়াব। কিন্তু ভুয়া সংবাদ দিয়ে চরিত্রহনন করলে তার দায় নিতে হবে।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ও একটি রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রেস কনফারেন্স করে একইসঙ্গে রাজনৈতিক বার্তা দেন। ড. ইউনুসকে ইঙ্গিত করে তিনি অভিযোগ করেন, লন্ডনে বসে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে আগেভাগেই বিদেশি শক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি সংবাদমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, প্রমাণবিহীন দুর্নীতির সংবাদ ছড়িয়ে রাজনৈতিক চরিত্রহননের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাগজপত্র, অডিও, ভিডিও কিংবা সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে পারেনি কেউ। “এক বছরে একজনও যদি প্রমাণ দিতে পারে আমরা দুর্নীতি করেছি, তবে রাজনীতি ছেড়ে দেব,” তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন।
ভোট প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, কেবল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেই হবে না, বরং পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থার নিয়মকানুন বদলাতে হবে। “আগে দেখা গেছে রেফারি গোল দিয়েছে, প্রশাসন খেলোয়াড় হয়ে গেছে। এবার নিয়ম বদলাতে হবে। রেফারি রেফারি থাকবে, খেলোয়াড় খেলোয়াড় থাকবে, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে।”
হাসনাত আব্দুল্লাহ জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন অবশ্যই দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে—যে সময়েই হোক, নির্বাচন হতে হবে। তবে তা হতে হবে গণপরিষদ নির্বাচন, যেখানে জনগণ সত্যিকারের বিকল্প বেছে নিতে পারবেন। তিনি আরো যোগ করেন, “জনগণ যদি আমাদের প্রত্যাখ্যান করে, সেটি আমরা মেনে নেব। কিন্তু সমঝোতার নির্বাচন জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার নামান্তর।”
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব জহুরুল ইসলাম, আরিফ সোহেল ও ফরিদুল হক। বক্তারা সবাই জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।