শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি আদায়ে আগারগাঁওয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এতে রাজধানীতে চরম যানজট ও ভোগান্তি তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আগারগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়েছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচি। কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি দ্রুতই জনদুর্ভোগে রূপ নেয়। দুপুর ১২টার কিছু পর থেকেই আগারগাঁও সড়কের বিভিন্ন অংশে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এতে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে এবং অফিসগামী যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। তাদের মূল দাবি হলো—
প্রথমত, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ১০ম গ্রেডের চাকরির পদ শুধুমাত্র কৃষিবিদদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বিএডিসির কোটা বাতিল করে কোনোভাবেই নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাড়া ৯ম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
তৃতীয়ত, কৃষি বা কৃষি-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন না করলে কেউ সরকারি বা ব্যক্তিগতভাবে ‘কৃষিবিদ’ উপাধি ব্যবহার করতে পারবে না—এ বিষয়ে সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়গুলো উপেক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন অ-কৃষি ডিগ্রিধারীরা কৃষি খাতে প্রবেশ করে চাকরি পাচ্ছেন, অথচ কৃষিবিদরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে পেশাগত মর্যাদা ও যোগ্যতার প্রতি অবিচার হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
গত বুধবার রাতে কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের এক বৈঠকে এ অবরোধ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে সংগঠনের ফেসবুক গ্রুপ থেকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নেন এবং বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল নিয়ে আগারগাঁওয়ে পৌঁছে প্রধান সড়ক অবরোধ করেন।
অবরোধের কারণে সকাল থেকেই আগারগাঁও এলাকায় যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। মেট্রোরেল স্টেশন থেকে বের হওয়া যাত্রীরা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে বাধ্য হন। অনেক অফিসগামী ও সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও নারী-শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
অবরোধস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ন্যায্য দাবি সরকার যদি দ্রুত না মানে তবে তারা আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা অনেকদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু বারবার উপেক্ষা করা হচ্ছে। তাই আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।”
অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আন্দোলনরত আরেকজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা দুঃখিত যে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু আমাদেরও তো ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে। তাই কিছু সময় কষ্ট হলেও আমাদের দাবি মানা ছাড়া উপায় নেই।”
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তবে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবেই সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। পুলিশের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ বা উত্তেজনার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কৃষিবিদদের এই আন্দোলন সরকারকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ কৃষি খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ, আর এ খাতের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছেন। আন্দোলনের ফলে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
বর্তমানে অবরোধ চলমান রয়েছে, আর যান চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।