বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন হলে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দিগন্তের সূচনা হবে।
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতা ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এক ফেসবুক পোস্টে এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি লিখেছেন, এই নির্বাচন কেবলমাত্র ছাত্রদের নেতৃত্ব বাছাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের সাথেও গভীরভাবে সম্পর্কিত। তার মতে, যদি ডাকসু নির্বাচন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, তাহলে বাংলাদেশ নতুন এক রাজনৈতিক দিগন্তের দিকে অগ্রসর হবে। এখানে কে জিতল বা কে হারল সেটির চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—দেশ হিসেবে আমরা কি একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলাম কি না।
ইশরাক জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে প্রকৃত পরিবর্তন আসতে হলে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডাকসু নির্বাচন সেই সুযোগ করে দিতে পারে। যদি প্রার্থীরা, ভোটাররা এবং সব রাজনৈতিক পক্ষগুলো সম্মিলিতভাবে একটি নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তাহলে এই নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তখন ব্যক্তি বা দলের জয়ের চেয়ে বড় জয় হবে বাংলাদেশের।”
তিনি আসন্ন এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব ছাত্র সংগঠন ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি শুভকামনা জানান। তার মতে, ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গণতান্ত্রিক চর্চাকে এগিয়ে নিতে এবং স্বৈরাচারী রাজনীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের শেষ দিন ছিল বুধবার। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সেদিনও ৯৩টি ফরম বিতরণ হয় এবং ১০৬টি জমা পড়ে। এর ফলে এখন পর্যন্ত মোট ৬৫৮ জন প্রার্থী কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন হলভিত্তিক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর অংশগ্রহণকে বিশ্লেষকরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এই ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডাকসু শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি সংস্থা নয়; বরং এটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। ঐতিহাসিকভাবে ডাকসু আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারকার ডাকসু নির্বাচনও রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা বয়ে আনতে পারে।
অনেকেই মনে করছেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজের ভেতরে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসবে, যারা ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। অন্যদিকে কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করছেন, যদি সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় না থাকে, তাহলে নির্বাচনের প্রতি আস্থাহীনতা তৈরি হতে পারে। তবে ইশরাক হোসেনের মতো অনেকেই বিশ্বাস করেন, এ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষভাবে হয়, তাহলে সেটি কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক বিকাশের জন্য এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
সব মিলিয়ে, আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এখন শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, বিশ্লেষক এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা ও কৌতূহল উভয়ই বাড়ছে। নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা অনুষ্ঠিত হলে, সেটিই হবে জাতির জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়।