গ্রেপ্তারের পর তৌহিদ আফ্রিদির নানা অপকর্ম প্রকাশ্যে আসছে। তার বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়ে ভালো উকিল খুঁজছেন স্বপন আহমেদ।
বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটর জগতে আলোচিত নাম তৌহিদ আফ্রিদি। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর তার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একের পর এক অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন তাদের ক্ষোভের কথা। এরই ধারাবাহিকতায় এবার মামলার হুঁশিয়ারি দিলেন আরেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বপন আহমেদ।
সোমবার (২৫ আগস্ট) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় স্বপন স্পষ্ট করে জানান, তিনি তৌহিদ আফ্রিদির বিরুদ্ধে মামলা করার কথা ভাবছেন। এজন্য তিনি একজন দক্ষ উকিল খুঁজছেন। তার ভাষায়, “আমি মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার পাশে ভালো একজন আইনজীবী প্রয়োজন। এরা আমার জীবনের মূল্যবান এক বছর কেড়ে নিয়েছে। তখন আমার কষ্টে কারো মন গলেনি। আল্লাহ দেরি করেন, কিন্তু কাউকে ছাড় দেন না।”
এর আগে গত রোববার (২৪ আগস্ট) বরিশাল মহানগরের বাংলাবাজার এলাকায় সিআইডি বিশেষ অভিযান চালিয়ে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে। পরে সেদিন রাতেই তাকে ঢাকায় আনা হয়। সোমবার সকালে আদালতে হাজির করা হলে সিআইডি তার ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত শুনানি শেষে তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আফ্রিদির গ্রেপ্তারের পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় তুমুল আলোচনার ঝড়। একাধিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে থাকেন। কেউ দাবি করেন, তিনি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেছেন, কেউ আবার বলেন ব্যক্তিগতভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তার কারণে। এসব অভিযোগের অনেকটাই এখনও প্রমাণের পর্যায়ে আসেনি, তবে ঘটনাগুলো নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
স্বপন আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে আফ্রিদির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। নিয়মিত ফেসবুক স্ট্যাটাস ও লাইভে তিনি অভিযোগ করেছেন যে আফ্রিদি নানাভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন। এবার সরাসরি আইনের আশ্রয় নিতে চাওয়ায় বিষয়টি আরও আলোচিত হয়ে উঠেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৭ আগস্ট তৌহিদ আফ্রিদির বাবা ও মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। বাবার গ্রেপ্তারের কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেকে আটক করায় অনেকে বলছেন, পরিবার জুড়েই নানা ধরনের অনিয়ম ও অভিযোগের প্রমাণ মিলছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটর কমিউনিটিতে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। জনপ্রিয়তা ও প্রভাব খাটিয়ে অনেকে ভিন্নভাবে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন, যা শেষ পর্যন্ত আইনের জালে আটকে যাচ্ছে। স্বপন আহমেদের মামলার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, আফ্রিদির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই আরও জটিল হতে পারে।
বর্তমানে নেটিজেনদের মধ্যে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—অভিযোগ প্রমাণিত হলে তৌহিদ আফ্রিদির কী হবে? তিনি কি শুধু কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবেই ব্যর্থ হবেন, নাকি পুরো ক্যারিয়ারই অন্ধকারে ঢেকে যাবে?
একইসাথে মানুষের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে, স্বপন আসলেই মামলার প্রক্রিয়া শুরু করবেন কিনা। কারণ, তিনি প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন—এবার তিনি থামবেন না, ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সবমিলিয়ে বলা যায়, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এই দ্বন্দ্ব এখন শুধুই ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং সামাজিক ও আইনি লড়াইয়ের এক নতুন রূপ নিচ্ছে। সামনে এই মামলা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় আছেন সবাই।