আফগান মাটি থেকে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতিসংঘে কড়া ভাষায় সতর্ক করলো পাকিস্তান। তেহরিক-ই-তালিবান, বিএলএ ও আইএস-খোরাসানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ চায় ইসলামাবাদ।
আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক মহলকে সতর্ক করলো পাকিস্তান। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া এক বক্তব্যে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, “আফগানিস্তানের অশাসিত অঞ্চল এখন বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। সেখান থেকে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি), বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ও মজিদ ব্রিগেড পাকিস্তানের কৌশলগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে হামলার ছক করছে।
তিনি আরও বলেন, এই হুমকি শুধু পাকিস্তানের সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোটা অঞ্চল এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। আফগানিস্তান যেন আর কোনোভাবেই সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গত ২৮ জুন উত্তর ওয়াজিরিস্তানে ভয়াবহ আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ১৬ জন সেনা নিহত হন। এরপর বাজাউর এলাকায় রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে মারা যান একজন সহকারী কমিশনারসহ আরও পাঁচজন কর্মকর্তা। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এইসব হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ছিল অত্যাধুনিক ও বিদেশি, যেগুলো আফগান সীমান্ত থেকে আসা সন্ত্রাসীরা ফেলে গিয়েছে।
রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনুযায়ী, বর্তমানে টিটিপির সদস্য সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার, এবং তারা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পাশাপাশি আফগানিস্তানে আইএস-খোরাসান, আল-কায়েদা এবং বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিও দিন দিন বাড়ছে।
এ ধরনের হামলার বাস্তবতায়, সোমবার আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সচিব পর্যায়ে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের এপ্রিল মাসে কাবুল সফরের ধারাবাহিকতা।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব (আফগানিস্তান ও পশ্চিম এশিয়া) রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আলী আসাদ গিলানি। আফগান পক্ষের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুফতি নূর আহমদ নূর।
বৈঠকে আঞ্চলিক সন্ত্রাসবাদ, নিরাপত্তা, ট্রানজিট ট্রেড, সীমান্ত সচলতা ও যোগাযোগ বৃদ্ধির নানা দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। দু’পক্ষই একমত হয় যে, সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলা ছাড়া এ অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বৈঠকে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সহজীকরণেও বেশ কিছু প্রস্তাব উত্থাপন করে পাকিস্তান। এর মধ্যে ছিল ১০ শতাংশ ট্রানজিট ফি বাতিল, বীমা গ্যারান্টির সহজীকরণ, সীমান্ত পরীক্ষায় নমনীয়তা ও স্ক্যানিং প্রক্রিয়া হ্রাস, এবং ট্র্যাক অ্যান্ড ট্রেস সিস্টেম কার্যকর করার দাবি।
পাকিস্তান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, আফগানিস্তানে সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় শুধু পাকিস্তান নয়, পুরো অঞ্চল জুড়েই হুমকির পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
পাকিস্তানের জাতিসংঘে এই কড়া অবস্থান শুধু একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা উদ্বেগ নয়, বরং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার বিষয়। আফগানিস্তানে গঠিত শূন্যতার সুযোগ নিয়ে যেভাবে সন্ত্রাসীরা সংগঠিত হচ্ছে, তাতে এই অঞ্চলের সব দেশই চাপে পড়বে। ফলে এ মুহূর্তে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।