রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামানকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ গ্রেপ্তার করেছে। আদালত তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশে আলোচিত আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান অবশেষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) শনিবার রাতে তাকে সীমান্ত এলাকা থেকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
শনিবার (২৩ আগস্ট) গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানা এলাকায় বিথারী সীমান্ত থেকে আরিফুজ্জামানকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্বরূপনগর থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর মামলা দায়ের করা হয়। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে।
পরদিন রোববার (২৪ আগস্ট) বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তবে বিএসএফ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। একইসাথে কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশের উপদূতাবাসও এ ঘটনায় কিছু জানে না বলে জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আরিফুজ্জামান গত বছরের আগস্ট মাস থেকে পলাতক ছিলেন। তিনি রংপুরে দায়িত্ব পালনকালে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হন। ওই ঘটনার পর ১৪ আগস্ট থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে বদলি করে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এপিবিএন-২ এর সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে পাঠানো হলেও তিনি নতুন কর্মস্থলেও যোগ দেননি।
অবশেষে এ বছরের ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ততদিনে তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভেতরে শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দুর্নীতির প্রশ্ন আবারও সামনে চলে এসেছে। একজন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এত দীর্ঘ সময় পলাতক থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নজরদারি ব্যবস্থার প্রতি নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরিফুজ্জামানকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ চুক্তি বা বিশেষ কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে তাকে ফেরত আনার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ সরকার।
অন্যদিকে, নিহত আবু সাঈদের পরিবার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, দ্রুত তাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে, আর মূল আসামিরা পলাতক থাকায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত হচ্ছে না।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও এই ঘটনাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন তুলছেন—কীভাবে একজন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এতদিন নজরদারি এড়িয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকতে পারে?
সবশেষ খবর অনুযায়ী, ভারতীয় আদালতের রায়ের ফলে আরিফুজ্জামান অন্তত দুই সপ্তাহ জেল হেফাজতে থাকবেন। এরপর তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া এগোবে। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তাকে দেশে ফেরানোর আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।