বাংলাদেশের বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে ২০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আজ রোববার, ৮ মার্চ, ২০২৫ তারিখে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে বি রুমি, জহিরুল ইসলাম সুমন এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ।
এদিকে, আদালতকক্ষে আবরার ফাহাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এই রায় ঘোষণার পর আবরারের পরিবার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বিচার বিভাগের প্রতি তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হতে দেখা গেছে।
হাইকোর্টে শুনানি ও রায় ঘোষণার বিস্তারিত:
এর আগে, ২৪ ফেব্রুয়ারি আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষ হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল, এবং গত বছরের অক্টোবর মাসে এ মামলার শুনানির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন।
২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স এবং মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ৬ হাজার ৬২৭ পৃষ্ঠার ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায়, দণ্ডিত আসামিরা উচ্চ আদালতে ফৌজদারি আপিল ও জেল আপিল করতে পারেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা:
এ রায়ে, ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা মূলত বুয়েট ছাত্রলীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে মেহেদী হাসান রাসেল, মেহেদী হাসান রবিন, অনিক সরকার অপু, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মুনতাসির আল জেমি, মোজাহিদুর রহমান, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, শামীম বিল্লাহ, মাজেদুর রহমান মাজেদ, খন্দকার তাবাক্কারুল ইসলাম তানভীর, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মিজানুর রহমান, শামছুল আরেফিন রাফাত, মুজতবা রাফিদ এবং এসএম মাহামুদ সেতু অন্যতম।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামি:
এছাড়া, পাঁচজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন মুহতাসিম ফুয়াদ, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, অমিত সাহা, আকাশ হোসেন এবং মোয়াজ আবু হোরায়রা।
এটি একটি বড় পদক্ষেপ:
এ রায়ের মাধ্যমে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা সমাজের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। এমনকি, এই রায়টি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে দেশে একটি বড় বার্তা দিয়েছে। এই রায় দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করবে এবং আইন ব্যবস্থায় আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করবে।
আবরার ফাহাদের হত্যা:
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন ৭ অক্টোবর, আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মাত্র ৩৭ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ১৩ নভেম্বর মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়।
এই মামলার রায় দেশের জনগণের কাছে দৃষ্টান্তমূলক হতে পারে এবং এর মাধ্যমে দেশে ছাত্র রাজনীতি, ক্ষমতা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হতে পারে।



















