আড়াই মাসে এনসিপিতে ২৬ নেতার পদত্যাগ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In just two and a half months, 26 leaders have resigned from the National Citizen Party (NCP), citing irregularities, lack of transparency, and ideological conflicts, plunging the party into turmoil.

মাত্র আড়াই মাসে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র ২৬ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে অনিয়ম, আদর্শিক অসঙ্গতি ও নেতৃত্ব সংকট নিয়ে, যা দলে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের হাত ধরে আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মাত্র আড়াই মাসের মাথায়ই বড় সংকটে পড়েছে। দলীয় কার্যক্রমে অনিয়ম, নেতৃত্বে অস্বচ্ছতা, পদায়নে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এবং আদর্শিক বিচ্যুতির অভিযোগে একের পর এক নেতা পদত্যাগ করায় দলটির ভেতরে মারাত্মক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে অন্তত ২৬ জন নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এনসিপির জন্ম হয়েছিল বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে একটি নতুন রাজনৈতিক বিকল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সূচনা পর্বেই দলীয় কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তুষ্টি তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, নীতি-নৈতিকতা থেকে সরে গিয়ে দলটি একক সিদ্ধান্তনির্ভর হয়ে উঠছে। ফলে প্রকৃত কর্মীরা মূল্যায়ন না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

গত আড়াই মাসে প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও থেকে এনসিপির নেতাদের পদত্যাগের খবর আসছে।

১০ আগস্ট ফরিদপুর সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, দলের কার্যক্রম ও অবস্থান জুলাই বিপ্লবের নীতি-নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তার ব্যক্তিগত আদর্শের সঙ্গে মেলে না।

৯ আগস্ট শিবচর উপজেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী শাকিল খানসহ চারজন নেতা একযোগে পদত্যাগ করেন। তাদের অভিযোগ—দলের থানা পর্যায়ের দায়িত্ব অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

৮ আগস্ট সাতকানিয়া উপজেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক এ ইউ মাসুদ (আরফান উদ্দিন) পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পুরো কমিটি এক ব্যক্তির একক সিদ্ধান্তে গঠিত হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

১ আগস্ট শরীয়তপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম ও সদস্য পলাশ খান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান।

জুলাই মাসেও বেশ কয়েক দফায় নেতারা দল ছেড়েছেন। ১৮ জুলাই ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা থেকে ইসমাইল হোসাইন ও ইঞ্জিনিয়ার আলাউদ্দিন পদত্যাগ করেন। তারা জানান, কমিটি গঠন নিয়ে কোনো পরামর্শ করা হয়নি এবং তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১২ থেকে ১৪ জুলাই সিলেটের বিশ্বনাথ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা থেকে রুহুল আমিন, নাদিম মাহমুদ, শাহেদ আহমেদ ও ফাহিম আহমদ দল ছাড়েন। ২০ জুলাই আরও চারজন—এনামুল হক মারুফ, তারিকুল ইসলাম, কিবরিয়া আহমদ ও কামরুল হাসান—একযোগে পদত্যাগ করেন।

২৯ জুন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন পদত্যাগ করেন।
২৫ জুন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কমিটি থেকে তৌফিক হাসান, মোক্তাদি কেমি ও জাহাঙ্গীর আলম জাকির সরে দাঁড়ান।
১৯ জুন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা কমিটির হাফিজুর রহমান পদত্যাগ করেন, তার আগের দিন একই কমিটি থেকে হাদিউজ্জামান (রাফি), ফুয়াদ হাসান ও রাফিউল ইসলাম পদত্যাগ করেছিলেন।

পদত্যাগীদের অভিযোগ, দলের ভেতরে কোনো গণতান্ত্রিক কাঠামো নেই। পদায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অনুপস্থিত, গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া হচ্ছে অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের। অনেক ক্ষেত্রেই নেতাদের না জানিয়ে তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের নিষ্ঠাবান কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

আরেকটি বড় অভিযোগ হলো, দলটি প্রতিষ্ঠার মূল আদর্শ থেকে সরে আসছে। বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের পরিবর্তে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত ও অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রাধান্য পাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আড়াই মাসের মাথায়ই যদি ২৬ নেতা দল ছাড়েন, তবে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এতে এনসিপির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনের পথে বড় বাধা সৃষ্টি হবে।

বর্তমানে এনসিপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি স্পষ্ট। একদিকে নতুন দল হিসেবে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে একের পর এক পদত্যাগ দলের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিকল্প হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই এভাবে সংকটে জড়িয়ে পড়া দলটির জন্য এক অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

No comments found