close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

আ’লীগের সভাপতি হলেন এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
In Bagerhat’s Mongla, controversy erupts as Awami League leader Matiar Rahman Morol is allegedly appointed as NCP’s joint coordinator. Opposition parties claim this is nothing but a strategy to rehabi..

বাগেরহাটের মোংলায় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মোড়লকে এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী করার অভিযোগ ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। বিরোধী দলগুলোর দাবি—এটি মূলত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের একটি কৌশল।

বাগেরহাটের মোংলায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমেছে নতুন ঝড়। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন চাঁদপাই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের নেতা মতিয়ার রহমান মোড়ল। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের এই অভিজ্ঞ নেতাকে হঠাৎ করেই এনসিপি (ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন পার্টি)-র যুগ্ম সমন্বয়কারী পদে বসানো হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, আওয়ামী সরকারের পতনের পরও মতিয়ার রহমান এলাকায় প্রভাবশালী অবস্থান ধরে রেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বছরের পর বছর ধরে মাদক ব্যবসা ও জুয়া সিন্ডিকেট পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। তাই নতুন রাজনৈতিক পরিবেশে টিকে থাকার জন্যই তিনি এনসিপির ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

১৬ আগস্ট এনসিপির চাঁদপাই ইউনিয়ন সমন্বয় কমিটির অনুমোদন ঘোষণা করেন উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মৃধা মাজেদুল ইসলাম ও সহ-সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ মেরিন। এই কমিটিকে আগামী ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঘোষিত কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে রাখা হয় মো. আবু সিদ্দিক জোমাদ্দারকে। আর যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে নাম আসে মতিয়ার রহমান মোড়লসহ আরও কয়েকজনের—মো. রাসেল শেখ, রবিউল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম সাগর, শামীম চৌকিদার। সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় উত্থান বিশ্বাস, মো. আকরাম, জসিম শেখ, বিকু, মো. ফরিদ, মো. নোমান সাদিক, আখতার, মো. শহিদুল শেখ, গোলাম রাব্বি এবং মামুন হাওলাদারকে।

কিন্তু এনসিপির এই ঘোষণার পরেই স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিরোধী দলগুলো একে স্পষ্টভাবে “আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন প্রক্রিয়া” বলে আখ্যায়িত করছে। পৌর বিএনপি নেতা এমরান হোসেন ও সফিকুল ইসলাম শান্ত সাংবাদিকদের বলেন, “মতিয়ার রহমান মোড়ল একজন চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁকে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো মানে আসলে আওয়ামী লীগকেই আবার নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত করা। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কোহিনূর সরদারও একই সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, “যদি সত্যিই এমন ঘটে থাকে তবে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠবে।” এদিকে পৌর যুবদল নেতা বিএম ওয়াসিম আরমান দাবি করেছেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, মোড়ল লাখ টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়েছেন। অর্থাৎ মূলত টাকার বিনিময়েই আওয়ামী লীগকে এনসিপির ভেতরে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এটা আমরা কখনোই মেনে নেব না।”

তবে এই বিতর্কে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন মতিয়ার রহমান মোড়ল। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, “আমি এনসিপির কোনো কমিটিতে নেই।” এরপরই তিনি ফোন কল কেটে দেন। অন্যদিকে এনসিপির উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মৃধা মাজেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমাদের দলে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা থাকতে পারবে না। যদি কেউ ভুলক্রমে কমিটিতে ঢুকে গিয়ে থাকে তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে।”

এমন ঘোষণার পরও স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন রয়ে গেছে—তাহলে কেন এনসিপির ঘোষিত তালিকায় মতিয়ার রহমান মোড়লের নাম এল? এটা কি শুধুই রাজনৈতিক ফাঁকফোকর, নাকি এর পেছনে কোনো গোপন সমঝোতা রয়েছে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ পতনের পরও অনেক বিতর্কিত নেতা টিকে থাকতে চাইছেন নতুন দলের ছায়ায়। ফলে ক্ষমতা হারালেও প্রভাব ধরে রাখার জন্য এই ধরনের রাজনৈতিক রদবদল হতে পারে। তবে এর ফলে এনসিপির ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

এখন স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের নজর—এনসিপি নেতৃত্ব তাদের ঘোষণা মতো সত্যিই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ নেয় কিনা, নাকি এই বিতর্ক ধামাচাপা দিয়েই মতিয়ার রহমান মোড়ল নতুন রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু করেন।

Ingen kommentarer fundet