বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রবিরোধী একটি মাফিয়া ও সন্ত্রাসী দল। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা ভারতের লোক এবং দেশে গণতন্ত্রের কোনো পরিবেশ নেই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগকে সরাসরি “মাফিয়া ও সন্ত্রাসী দল” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের নয়, বরং ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে কক্সবাজারের চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষে এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তার বক্তব্যে সালাহউদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, দেশে ইতোমধ্যেই নির্বাচনের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে এবং আগামী ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা হবে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের ভেতরে কোনোদিন গণতন্ত্র ছিল না, বরং তারা সর্বদা গণতন্ত্রকে দমিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত, কারণ তারা বারবার দেশের মানুষকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছে।
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এমন কিছু রাজনৈতিক দল, যারা সবসময় বিভ্রান্তিকর রাজনীতি করেছে। ইতিহাসের নানা সময়ে এই দলগুলো একবার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আবার কখনও জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এবারও তারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের মতো সুযোগ খুঁজছে।
সালাহউদ্দিন সমালোচনা করে বলেন, যারা আজ সংস্কার কমিশনে গিয়ে আলোচনা করছে, দিনশেষে ভোজন করে চলে আসছে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না—তাদের মানুষ খুব ভালোভাবেই চেনে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ঘরে ঘরে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে হবে। তার ভাষ্য, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন পৃথিবীতে এক নজিরবিহীন নির্বাচনে পরিণত হবে এবং এটি দেশের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আশা পূরণের পথ খুলে দেবে।
তিনি আরও যোগ করেন, গত ১৭ বছর ধরে দেশে প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল না। রাজনীতি হয়েছিল কারাগারে বন্দি, লন্ডনে নির্বাসনে বা শিলংয়ে আশ্রিত অবস্থায়। এখন রাজনীতি করার জন্য একটি উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা দেশের মানুষকে নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এম মোবারক আলী। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান এবং কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না।
এর আগে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী।
সম্মেলনকে ঘিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আয়োজিত এ সম্মেলন উপলক্ষে পুরো চকরিয়া সরকারি কলেজ এলাকা উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। সড়ক-উপসড়কজুড়ে তৈরি হয় তোরণ, ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনের বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা।
চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল সহকারে সম্মেলনে যোগ দেন। অর্ধলক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সম্মেলন শেষে জনসভাটি এক বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে রূপ নেয়, যা এলাকায় বিরল রাজনৈতিক সমাবেশ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নেয়।