close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

২৩ বছর কারাভোগের পর নতুন জীবনের পথে দুলাল: জেলা প্রশাসনের পুনর্বাসন উদ্যোগ..

Rahmatullah Ashik avatar   
Rahmatullah Ashik
২৩ বছরের কারাভোগ শেষে মুক্তি পেয়ে দুলাল হোসেন পেলেন জেলা প্রশাসনের পুনর্বাসন সহায়তা।..

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার বাসিন্দা দুলাল হোসেনের জীবন যেন একটি নাটকীয় ঘুরপাকের গল্প। মাত্র ২৫ বছর বয়সে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ডের সাজাপ্রাপ্ত দুলাল দীর্ঘ ২৩ বছরের কারাভোগের পর সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছেন। এই দীর্ঘ সময় তিনি রাজশাহী ও নওগাঁ কারাগারে কাটিয়েছেন। কিন্তু মুক্তির পর কীভাবে নতুন জীবনে পা বাড়াবেন, তা নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা। তার এই নতুন জীবনের পথে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে নওগাঁ জেলা প্রশাসন।

সোমবার (১৮ আগস্ট) নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল দুলালের হাতে তুলে দিয়েছেন একটি মুদি দোকান। পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে তাকে নগদ অর্থ এবং বসবাসের জন্য একটি ঘর দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। দুলালের নতুন জীবনের যাত্রা শুরু হলো এই সহায়তার মধ্য দিয়ে।

দুলালের জীবনযুদ্ধের গল্পটি শুরু হয় তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর। সংসার জীবনে মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় স্ত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় দুলালকে আসামি করা হয়। ২০০২ সালে তিনি আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। বন্দী জীবনে দুলাল ছিলেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং দায়িত্বশীল। তার শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণের জন্য কারাগারের অন্যান্য বন্দীদের দেখাশোনার দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। কিন্তু মামলা চলাকালে উকিল খরচ ও অন্যান্য ব্যয়ে পরিবারের শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি হয়ে যায়। একসময় আর কেউ তাকে দেখতে আসতেন না, শুধুমাত্র তার মা আয়েশা মাঝে মাঝে কিছু টাকা নিয়ে আসতেন।

মুক্তির পর দুলালের মা আয়েশা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, 'আমি ছেলেকে ফিরে পেয়ে অনেক খুশি। যদি তাকে একটা ঘর দেওয়া হয় তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে।' গ্রামবাসীরাও একই দাবি তুলেছেন। তাদের মতে, দুলালের পাশে দাঁড়ানো জরুরি, যাতে তিনি সমাজে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, 'সমাজে প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার আছে। দুলালের ২৩ বছর জেলখানায় কেটে গেছে। তিনি যেন নতুন জীবনে স্বপ্ন গড়তে পারেন এবং আর কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্যই সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে।'

দুলালের এই পুনর্বাসন শুধু তার জীবনের জন্য নয়, বরং সমগ্র সমাজের জন্য একটি উদাহরণ। একজন বন্দী যখন মুক্তি পেয়ে সমাজে ফিরে আসে, তখন তার জন্য পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ দুলালের জীবনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে এবং সমাজের অন্যান্যদের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ সমাজে অপরাধের পুনরাবৃত্তি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

Nessun commento trovato