close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: আপিল বিভাগে খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন গ্রহণ..

সুভাষ মজুমদার avatar   
সুভাষ মজুমদার
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ।..

ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

 

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ।

এর আগে, ১ জুন আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ‘লিভ টু আপিল’ মঞ্জুর করেন। অর্থাৎ খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি পান রাষ্ট্রপক্ষ।

হাইকোর্টের বিতর্কিত রায়

গত বছরের ১৩ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অধস্তন আদালতের দেওয়া যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে সব আসামিকে খালাস দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র (দ্বিতীয় চার্জশিট) আইন অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেটের পরিবর্তে সরাসরি বিচারিক আদালত আমলে নিয়েছে, যা আইনের পরিপন্থী। এ ভিত্তিতে অভিযোগ গঠনসহ পুরো বিচার প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষিত হয়।

মামলার পটভূমি

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং আহত হন প্রায় ৩০০ জন। ওই হামলার মূল লক্ষ্য ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা।

ঘটনার পর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মামলার পুনঃতদন্ত শুরু হয়। পরের বছর ২২ জনকে আসামি করে প্রথম অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়।

বিচারিক আদালতের রায়

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে—

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড,

তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড,

এবং ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।


হাইকোর্টে রায় ও আপিল

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন। পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুলাইয়ে রায় ঘোষণায় সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

খালাসপ্রাপ্তদের তালিকা

খালাসপ্রাপ্ত ৪৯ জনের মধ্যে রয়েছেন—

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত: বাবর, পিন্টু, এনএসআইর সাবেক ডিজি আবদুর রহিম, হরকাতুল জিহাদের তাজউদ্দিন, কাশ্মীরি নাগরিক মাজেদ ভাটসহ আরও অনেকে।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত: তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী কায়কোবাদ, হান্নান সাব্বির, ইয়াহিয়া, আব্দুর রউফ প্রমুখ।

স্বল্পমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত: সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির রুহুল আমিন, ডিএমপির উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান প্রমুখ।


বর্তমান অবস্থা

হাইকোর্টের এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছে। মঙ্গলবার সেটি গ্রহণ করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে মামলাটি এখন চূড়ান্ত শুনানির জন্য আপিল বিভাগে গড়াল।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ রায় বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে, কারণ এটি রাজনীতি, প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার সম্মিলিত দায়বোধ এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

No comments found