বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, দলের জন্য ১৫ বছর লড়াই করার পরও আজ তাকে নিজ দলের হাতেই ধাক্কার শিকার হতে হয়েছে।
বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ক্ষোভভরে বলেছেন, “১৫ বছর বিএনপির জন্য লড়াই করলাম, অথচ আজ তারাই আমাকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কার বদলে ধাক্কা আসবেই—এটাই বাস্তবতা।”
রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বক্তব্য দেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য রাজপথে সংগ্রাম করা এই নেত্রীর কণ্ঠে ফুটে ওঠে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ।
রুমিন ফারহানা অভিযোগ করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে বর্তমানে যিনি রয়েছেন তিনি মানুষকে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন। নির্বাচন কমিশনে এ সংক্রান্ত সব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কমিশন যে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে সেটিই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেখানে প্রার্থীর পক্ষ থেকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সংঘটিত হয়েছে।
তার ভাষায়, “আমি আশা করেছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আসবেন না। কিন্তু দেখা গেল, তিনি গুন্ডা-পান্ডা সঙ্গে নিয়ে ইসিতে প্রবেশ করেছেন। শুধু প্রবেশই নয়, বরং তারা কমিশনের ভেতরে মারামারি পর্যন্ত করেছেন। এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা, যা সরাসরি কমিশনের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে।”
এ সময় এনসিপি কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির প্রসঙ্গেও প্রতিক্রিয়া জানান রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, “যিনি আমার সঙ্গে ছিলেন তিনি পরিচিত মুখ নন, তিনি জামায়াত না এনসিপি—আমি জানি না। তবে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, প্রথমে আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। একজন নারী হিসেবে যখন আমাকে অপমানিত করা হলো, তখন আমার সহকর্মীরা নিশ্চুপ বসে থাকতে পারে না। ফলে পরিস্থিতি হাতাহাতিতে রূপ নেয়।”
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, বিএনপি বরাবরই বলে আসছে যে তারা ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যেতে চায়। তিনি নিজেও মনে করেন, ওই সময়কার সীমানা ছিল স্বচ্ছ ও যৌক্তিক। তার অভিযোগ, গত ১৫ বছরে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী সীমানা ভাগ করেছে, যা জনগণের জন্য অন্যায় ও অগ্রহণযোগ্য। খালেদা জিয়ার ইচ্ছাও ছিল ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া, আর তাই এ দাবিতে বিএনপি দৃঢ়ভাবে অটল রয়েছে।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, “আমি একজন আইনজীবী। আমার কেস আমি নিজেই উপস্থাপন করব—এটাই ছিল আমার সিদ্ধান্ত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কমিশনের ভেতরে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হলো, যা গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের জন্য কলঙ্কজনক।”
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য আত্মত্যাগ করার পর আজকের এই অভিজ্ঞতা তাকে ব্যথিত করেছে। “আমি লড়েছি দলের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের অধিকারের জন্য। কিন্তু আজ দলের ভেতরেই যদি আমাকে অপমানিত হতে হয়, তবে সেটি কষ্টকর এবং লজ্জাজনক।”
নির্বাচন কমিশনের ভেতরে যে অস্থিরতা ও হাতাহাতি ঘটেছে, তা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও অস্থিতিশীলতার বহিঃপ্রকাশ। রুমিন ফারহানার মতো একজন আলোচিত ও প্রভাবশালী নেত্রী যদি নিজ দলের মধ্যেই এমন আচরণের শিকার হন, তবে সাধারণ কর্মীরা আরও বেশি ভীত ও ক্ষুব্ধ হবেন।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কমিশনের ভেতরে দলীয় প্রার্থীদের সশস্ত্র অনুগামীদের নিয়ে আসা এবং প্রকাশ্যে হাতাহাতির ঘটনায় কমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্তৃত্ব নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা শুধু বিএনপির ভেতরকার দ্বন্দ্বই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। যেখানে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ার কথা, সেখানে উল্টো সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। আর এর ফলে গণতন্ত্র ও জনগণের আস্থার জায়গা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বিএনপির কর্মী ও সমর্থকদের জন্য রুমিন ফারহানার এ ক্ষোভ হয়তো নতুন এক প্রশ্ন তুলে দিল—দীর্ঘ সংগ্রামের পরও যদি একজন নিবেদিত নেত্রী দলের ভেতরেই অপমানিত হন, তবে তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে?