উজানের ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তিস্তা, পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিপৎসীমার কাছাকাছি কিংবা এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে অন্তত ১২ জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বহু এলাকায় ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুধবারের বুলেটিনে জানিয়েছে, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমন ধান ও সবজির খেত তলিয়ে গেছে, ঘরের ভেতর পানি ঢুকে পড়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
রাজশাহী মহানগরের পঞ্চবটি খড়বোনা এলাকার হালিমা বেগমের ঘরে হাঁটুপানি জমে আছে। রান্নার চুলা তুলতে হয়েছে চৌকির ওপর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সপ্তাহ ধরে পানির মধ্যে জীবন কাটাতে হচ্ছে। দীর্ঘসময় পানিতে থাকার কারণে অনেকের হাত-পা ঘা হয়ে গেছে। শ্রীরামপুরের বস্তিতে পদ্মার পানি ঢুকে পড়ায় ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এলাকার মানুষ বলছেন, প্রতি বছর একই দুর্ভোগ পোহাতে হয়, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেই।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাত খান অভিযোগ করেন, শহরের উন্নয়ন প্রকল্প থাকলেও শহরতলির অবস্থা করুণ। বড় বাজেট থাকা সত্ত্বেও সুষম উন্নয়ন হচ্ছে না, বরং ট্যাক্স বাড়ছে।
রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ১৫টি চরের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। অধিকাংশ বাড়ির টিউবওয়েল তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। স্থানীয় ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, বন্যা মোকাবিলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
নাটোরের লালপুরে পদ্মার পানি বেড়ে প্রায় ৫১৮ হেক্টর ফসলি জমি ও ১৮টি গ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী দুদিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গজলডোবা ব্যারাজ থেকে বিপুল পানি ছাড়ায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মার পানি বৃদ্ধিতে ৪ ইউনিয়নের হাজারো পরিবার পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ফসল। বন্যার কারণে ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভোলায় পানি বৃদ্ধিতে ইলিশা লঞ্চ ও ফেরিঘাট ডুবে গেছে। এতে ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও ভোলা-ঢাকা রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।