টিভির পর্দা থেকে মোদীর মন্ত্রিসভা, অতঃপর আমেথিতে পতন: স্মৃতি ইরানির উত্থান-পতনের রুদ্ধশ্বাস কাহিনী!..

Abdullah Al Mamun avatar   
Abdullah Al Mamun
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা: ভারতীয় রাজনীতির একসময়ের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র স্মৃতি ইরানি।..

টেলিভিশনের জনপ্রিয় পুত্রবধূ "তুলসী" থেকে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এবং অবশেষে আমেথির মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে কংগ্রেসের কাছে লজ্জাজনক পরাজয়—তার রাজনৈতিক জীবন যেন এক সিনেমার চিত্রনাট্য। এবারের মোদী ৩.০ মন্ত্রিসভায় তার অনুপস্থিতিই বলে দিচ্ছে, বিজেপির রাজনীতিতে তার প্রভাব এখন পড়তির দিকে।

অভিনেত্রী থেকে নেত্রী:

ভারতের ঘরে ঘরে স্মৃতি ইরানি পরিচিতি পেয়েছিলেন "কিঁউকি সাস ভি কাভি বহু থি" সিরিয়ালের 'তুলসী' চরিত্রে অভিনয় করে। কিন্তু অভিনয়ের ঝলমলে জগতের আড়ালেও তার মধ্যে ছিল তীব্র রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা। ২০০৩ সালে তিনি অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিতে যোগ দেন। প্রথমদিকে নির্বাচনে হার এবং গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ দাবি করে বিতর্কে জড়ালেও, দলের প্রতি আনুগত্যের কারণে তিনি ধীরে ধীরে বিজেপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন।

মোদীর আস্থাভাজন থেকে 'জায়ান্ট স্লেয়ার':

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর স্মৃতি ইরানির রাজনৈতিক জীবনের মোড় ঘুরে যায়। আমেথিতে রাহুল গান্ধীর কাছে নির্বাচনে হারার পরেও মোদী তাকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন। যদিও শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে তার এই মেয়াদ ছিল সমালোচিত।

কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচনে ঘটে যায় এক ঐতিহাসিক ঘটনা। গান্ধী পরিবারের দুর্গ হিসেবে পরিচিত আমেথি আসনে তিনি রাহুল গান্ধীকে পরাজিত করে "জায়ান্ট স্লেয়ার" বা "দানব-হত্যাকারী" খেতাব পান। এই বিশাল জয়ের পর মোদী ২.০ সরকারে তাকে নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

পতনের শুরু:

মন্ত্রী হিসেবে স্মৃতি ইরানির আগ্রাসী আচরণ এবং নারী নির্যাতনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তার নীরবতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠে। সংসদে তার আক্রমণাত্মক ভঙ্গি অনেক সময়ই দলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এরই মধ্যে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে আসে সেই মুহূর্ত, যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দেয়। আমেথির আসনে তিনি গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কিশোরী লাল শর্মার কাছে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হন। যে আমেথি তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল, সেই আমেথির ভোটাররাই তাকে প্রত্যাখ্যান করে।

এই পরাজয়ের ফলেই এবারের মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় তার জায়গা হয়নি। একসময়ের প্রভাবশালী এই নেত্রীর এমন পতন ভারতীয় রাজনীতিতে একটি বড় আলোচনার বিষয়। এখন প্রশ্ন হলো, স্মৃতি ইরানির রাজনৈতিক অধ্যায় কি এখানেই শেষ, নাকি তিনি আবার নতুন কোনো চমক নিয়ে ফিরে আসবেন—তা সময়ই বলে দেবে।

No comments found