মিনহাজুল বারী,বগুড়া প্রতিনিধি:
প্রচলিত ফসলের গতানুগতিক বৃত্ত থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা লিটন বাবু। সেই স্বপ্ন আর কঠোর পরিশ্রমে তিনি এখন একজন সফল কৃষক। মাত্র ৫০ শতাংশ জমিতে বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ করে তিনি এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তার এই সাফল্য এখন এলাকার অন্য বেকার যুবকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে সোনাতলা উপজেলার লোহাগড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই ৫০ শতাংশ জমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে লিটন বাবুর ড্রাগন ফলের বাগান। কংক্রিটের পিলারে সযত্নে বেড়ে উঠেছে সবুজ লতানো গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে গোলাপি আভা ছড়ানো কাঁচা-পাকা ড্রাগন ফল।
উদ্যোক্তা লিটন বাবু জানান, সবসময়ই তার নতুন কিছু করার ইচ্ছা ছিল। ইন্টারনেট ও টেলিভিশনে ড্রাগন ফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখে তিনি উদ্বুদ্ধ হন। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রায় পাঁচ বছর আগে নিজের ৫০ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। সঠিক পরিচর্যা ও জৈব সার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রথম বছর থেকেই ফলন পেতে শুরু করেন তিনি।
লিটন বলেন, "ড্রাগন একটি সিজনাল ফল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। প্রথম দিকে কিছুটা চিন্তা থাকলেও এখন আমি পুরোপুরি লাভবান। বছরে সব খরচ বাদ দিয়েও আমার ২ লক্ষ টাকার বেশি আয় হয়। স্থানীয় বাজারেই আমার সব ফল বিক্রি হয়ে যায়, পাইকাররা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যান।"
তিনি আরও জানান, ড্রাগন চাষে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ কিছুটা বেশি হলেও একবার গাছ দাঁড়িয়ে গেলে একাধারে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। রোগবালাই কম হওয়ায় এর পরিচর্যাও তুলনামূলকভাবে সহজ।
লিটন বাবুর এই সাফল্যে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে কাজ করেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সব ধরনের কারিগরি সহায়তা, সার ব্যবস্থাপনা এবং রোগবালাই দমনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানান, "লিটন বাবু একজন আদর্শ ও পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। আমরা শুরু থেকেই তার পাশে ছিলাম। ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি একটি লাভজনক ফসল। আমরা উপজেলার অন্য কৃষকদেরও এ ধরনের উচ্চমূল্যের অপ্রচলিত ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি।"
তিনি আরও বলের, "লিটন বাবুর এই সাফল্য দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও এখন ড্রাগন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের নতুন উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।"
লিটন বাবুর এই অনুকরণীয় উদ্যোগ প্রমাণ করে, সঠিক পরিকল্পনা এবং আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে যে কোনো তরুণই স্বাবলম্বী হতে পারে। তার এই সাফল্য সোনাতলাসহ পুরো বগুড়া অঞ্চলে ড্রাগন চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।