সিরাজগঞ্জ শহরের জগাই মোড় সংলগ্ন সেবা জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের পর ফাতেমা খাতুন (২৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুতে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, হাসপাতালের অবহেলা, আর্থিক লেনদেন এবং বিশেষজ্ঞ না হয়েও ইউরোলজিস্ট দিয়ে অস্ত্রোপচার করানোর কারণেই এ মৃত্যু হয়েছে।
ফাতেমা সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের ছাইতানতলী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী এনামুল সরকারের স্ত্রী এবং কেরামত আলী-মমতা খাতুনের কন্যা। গত ১০ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রসব বেদনা নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবার জানায়, দায়িত্বপ্রাপ্ত গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ইসমত আরা প্রথমে সিজার করতে অনীহা প্রকাশ করলেও হাসপাতাল মালিক শ্রী চিত্তরঞ্জন সরকার ও কর্মচারী মোহাম্মদ আলীর চাপের মুখে রোগীর শ্বশুর সম্মতি দেন।
পরে রাত ৮টার দিকে ইউরোলজিস্ট ডা. মোজাহারুল ইসলাম সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তবে পরদিন ভোরে ফাতেমার অবস্থার অবনতি ঘটে এবং সকাল ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের মা মমতা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “আমার মেয়ে হাসপাতালের অবহেলায় মারা গেছে। পরে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে ৭০ হাজার টাকা পাই, তবে ৫ হাজার টাকা তারা রেখে দেয়। কিন্তু টাকায় আমার মেয়ের জীবন ফেরত আসবে না, আমি ন্যায়বিচার চাই।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর প্রশ্ন—গাইনি সার্জন না হয়েও কীভাবে একজন ইউরোলজিস্ট সিজার অপারেশন করলেন? অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. মোজাহারুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, “হ্যাঁ, আমি গাইনি সার্জারি করতে পারি।”
হাসপাতাল মালিক শ্রী চিত্তরঞ্জন সরকারও বিষয়টি স্বীকার করে জানান, “ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সমাধান করা হয়েছে।” এতে ৬৫ হাজার টাকায় প্রসূতির জীবনের মূল্য নির্ধারণের অভিযোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা বলছেন, টাকার বিনিময়ে প্রসূতির মৃত্যু ‘মীমাংসা’ করার ঘটনা স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনা ও নৈতিক অবক্ষয়কে প্রমাণ করে। তারা দাবি জানিয়েছেন, অবহেলাজনিত চিকিৎসায় যেন আর কোনো মা প্রাণ না হারান, সেজন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ফাতেমার পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।