বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের তালতা থেকে আয়রা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার করলেন দেড় শাতাধিক মানুষ। জনদুর্ভোগ কমাতে রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ২৬ আগষ্ট মঙ্গলবার স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসেন সবাই। দীর্ঘ ১৫ বছরে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোয়া ফলে এই ছোট্ট পথ এলাকাবাসির জন্য হয়ে পড়েছে বড় দুর্ভোগের কারণ। প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে কৃষক, শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও অসুস্থ রোগী সহ প্রায় ৫ হাজার মানুষ। কিন্তু সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে তারা বছরের পর বছর ধরে কৃষিপণ্য বাজারে নিতে চরম সমস্যায় পড়ছেন। ট্রলি, ভ্যান, কিংবা ছোট যানবাহন কাদা ও গর্তে আটকে যায়। কৃষক আব্দুল মজিদ আক্ষেপ করে বলেন, পণ্য মাঠ থেকে বাড়ীতে তুললেও বাজারে নিতে পারি না, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় কষ্ট।
এই রাস্তার পাশে রয়েছে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তালতা উচ্চ বিদ্যালয়, তালতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তালতা সাউতুল হেরা হাফেজিয়া মাদ্রাসা। প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থীকে এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়, কিন্তু বর্ষার সময় হাঁটু কাদা পেরিয়ে স্কুলে যাওয়া তাদের জন্য যেন যুদ্ধের মতো। স্কুলছাত্রী রিফাত আরা জানায়, বই খাতা ভিজে যায়, স্কুলে যেতে দেরি হয়। অনেক সময় যেতে ইচ্ছেও করে না।
শুধু শিক্ষার্থী নয়, অসুস্থ রোগীদের জন্যও এই রাস্তা এক দুঃস্বপ্ন। জরুরি অবস্থায় রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গিয়ে পরিবারের লোকজন পড়েন বিপাকে, ফলে রোগীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কেউই কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। স্থানীয় যুবক সাহেব আলী বলেন, আমরা বারবার চেয়ারম্যানকে বলেছি, কিন্তু শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। অবশেষে মানুষ নিজেরাই এগিয়ে আসেন। স্বেচ্ছাশ্রমে দেড়শ জন একত্র হয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজে অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন হাফিজার রহমান, আব্দুল মোত্তালেব, ইসমাইল, সাব্বির, সৈকত আলম প্রমুখ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা কাদা ভরাট করেন, রাস্তা মেরামত করেন। তাদের এই উদ্যোগে ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমেছে। এটি স্থায়ী সমাধান নয়। এলাকাবাসী চান প্রশাসন দ্রুত উদ্যোগ নিক, যাতে স্থায়ীভাবে সড়কটি সংস্কার হয়। শিক্ষার্থী থেকে কৃষক সবাই একই কথা বলছে, "আমরা ভোট দেই, কর দিই, তাহলে কেন মৌলিক সুবিধা পাব না?"
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান বলেন, "রাস্তাটি সংস্কারের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।"
No comments found