জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হতে চাইলেন জেড আই খান পান্না। তবে ট্রাইব্যুনাল জানিয়ে দিল, এখন আর সেই সুযোগ নেই।
জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন আলোচিত-সমালোচিত আইনজীবী জেড আই খান পান্না। এই আবেদনটি মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ দাখিল করেন তার পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি বর্তমানে সাক্ষ্যগ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে গত ২৫ জুন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর সাবেক বিশেষ পিপি আইনজীবী আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই তিনি একাধিক দিনে আদালতে হাজির হয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই জেড আই খান পান্নার আইনজীবী হওয়ার আবেদনকে ট্রাইব্যুনাল গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি। আদালত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, মামলার এতদূর অগ্রগতির পর নতুন করে পক্ষে আইনজীবী পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করে বলেন, “ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর স্টেশন মাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই।”
ট্রাইব্যুনাল-১ এর পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, মামলাটি দীর্ঘ সময় ধরে চলছে এবং ইতিমধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণের ধাপ শুরু হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আইনজীবী পরিবর্তন করলে মামলার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে এবং এটি বিলম্বিত করার কৌশল হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
আইনজীবী জেড আই খান পান্না বাংলাদেশের আইনি মহলে পরিচিত একটি নাম। তিনি বিভিন্ন সময় মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে আলোচনায় এসেছেন। তবে তার এই আবেদনকে ঘিরে আদালতে এবং আইনজীবী মহলে নানারকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত একটি পদক্ষেপ, আবার কেউ বলছেন, একজন সিনিয়র আইনজীবীর পক্ষে মামলা পরিচালনার আবেদন করা স্বাভাবিক ঘটনা।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মনে করছেন, মামলার এ পর্যায়ে এসে নতুন আইনজীবী নিয়োগের চেষ্টা মূলত মামলার গতি কমানোর একটি কৌশল। তারা দাবি করেন, যেহেতু রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছেন, তাই নতুন আইনজীবী নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
এদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল দুজনেই বর্তমানে পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ, যা দেশের আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হওয়ার মতো গুরুতর অপরাধ। ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, আসামিদের অনুপস্থিতিতেও আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া চলবে এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হলো যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত করার কোনো চেষ্টা বরদাস্ত করবে না এবং নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী মামলার ধারা অব্যাহত থাকবে।