শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা সীমান্তে চোরাচালান ও অবৈধ ঔষধের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযানে বড় সাফল্য পেয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত ১৪ থেকে ২০ আগস্ট '২৫ পর্যন্ত সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি) পরিচালিত অভিযানে প্রায় ৭০ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ টাকা মূল্যের চোরাচালানী মালামাল, ভারতীয় মদ, মোবাইল ফোন এবং বিপুল পরিমাণ অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ জব্দ করা হয়েছে।
এই অভিযানের মাধ্যমে বিজিবি ৯টি ফার্মেসিকে জরিমানা করেছে এবং ক্ষতিকর ঔষধ ধ্বংস করেছে। অভিযানে বিজিবির সঙ্গে ছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
বিজিবি জানায়, ১৪ আগস্ট তালা বাজারে যৌথ অভিযানে সাতটি ফার্মেসিকে ১৬ হাজার টাকা জরিমানা এবং বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ জব্দপূর্বক তা ধ্বংস করা হয়। ১৫ আগস্ট সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০ বোতল ভারতীয় মদ ও অন্যান্য চোরাচালানী পণ্যসহ মোট ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল উদ্ধার করা হয়। ১৬ আগস্ট ১০ বোতল ভারতীয় মদ ও ৫২টি ভারতীয় মোবাইল ফোনসহ ২৫ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য জব্দ করা হয়।
১৭ আগস্ট প্রায় ১০ লক্ষ ৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ভারতীয় ঔষধ ও অন্যান্য চোরাচালানী মালামাল আটক করা হয়। ১৮ আগস্ট সদর উপজেলার কাথন্ডা বাজারে দুটি ফার্মেসিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং একই দিনে আরও একটি অভিযানে ৯ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হয়। ১৯ আগস্ট ৩০ বোতল ভারতীয় মদসহ শাড়ি ও কম্বল মিলিয়ে মোট ৮ লক্ষ ৪ হাজার ৭০০ টাকা মূল্যের পণ্য উদ্ধার করা হয়। ২০ আগস্ট ৯ বোতল ফেনসিডিল ও ৫ বোতল নেশাজাতীয় সিরাপসহ ১০ লক্ষ ১৪ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের চোরাচালানী মালামাল জব্দ করা হয়।
বিজিবির এই ধারাবাহিক অভিযানে সীমান্ত অঞ্চলের চোরাকারবারীদের নেটওয়ার্কে বড় ধরনের আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চোরাচালান রোধের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব হ্রাস ঠেকানো ও দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি, অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ জব্দ করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বিজিবি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বিজিবির এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ আশরাফুল হক জানান, চোরাকারবারী কর্তৃক বর্ণিত মালামাল শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে পাচার করায় তা জব্দ করা হয়। এভাবে ভারতীয় দ্রব্য সামগ্রী চোরাচালানের কারণে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি দেশ উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিজিবি টহলদল কর্তৃক উদ্ধারকৃত ভারতীয় মালামাল সাতক্ষীরা কাস্টমসে জমা করা হয়। এছাড়াও, মাদকদ্রব্যসমূহ সাতক্ষীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সাধারণ ডায়েরি করতঃ পরবর্তীতে জনসম্মুখে ধ্বংসের নিমিত্তে স্টোরে জমা হয়েছে।
এই অভিযানের মাধ্যমে সীমান্ত অঞ্চলে চোরাচালান প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিজিবির ভূমিকা প্রশংসনীয়। এই ধরনের উদ্যোগ চোরাচালান নেটওয়ার্ক ভেঙে দিয়ে দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ভবিষ্যতে এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।