close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা: টকশোতে বিএনপি-এনসিপি বাকযুদ্ধ..

Md Azhar Uddin avatar   
Md Azhar Uddin
আগামী নির্বাচন নিয়ে জনমনে সৃষ্ট অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক নেতাদের শিষ্টাচারহীন বক্তব্য নিয়ে এক টেলিভিশন টকশোতে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়েছেন বিএনপি ও এনসিপি নেতারা, যা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবক্ষয়কে সামনে ..

দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার অস্থিরতা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে এই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে, যেখানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে লিপ্ত হন। এই ঘটনা একদিকে যেমন রাজনৈতিক শিষ্টাচারের অভাবকে প্রকটভাবে তুলে ধরেছে, তেমনই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন নিয়ে জনমনে বিদ্যমান গভীর শঙ্কা ও অবিশ্বাসের চিত্রকেও স্পষ্ট করেছে।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে এনসিপি নেতা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক বিতর্কে তাকে 'ভিক্ষুকের সন্তান' এবং 'ডাকাত' বলে আক্রমণ করা হয়েছে, যা দেশের জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কাম্য নয়। তিনি বলেন, রাজনীতিতে সাধারণ ও প্রান্তিক পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষদের হেয় করার একটি精英वादी মানসিকতা কাজ করছে, যা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। এর জবাবে বিএনপি নেত্রী জানান, তিনি নির্দিষ্ট কোনো শব্দ ব্যবহার করেননি, বরং একটি 'ভিক্ষুকের মানসিকতা'র কথা বলেছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সংসদ সদস্য হিসেবে আইনসঙ্গতভাবে প্লটের জন্য আবেদন করা সত্ত্বেও তা নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই নামান্তর।

আলোচনার মোড় ঘুরে যায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং তার প্রেস সচিব নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বারবার আশ্বাস দিলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন আদৌ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় রয়েছে বলে জানান বিএনপি নেত্রী। তিনি এই অবিশ্বাসের পেছনে কয়েকটি যৌক্তিক কারণ তুলে ধরেন। প্রথমত, দেশের মানুষ সর্বশেষ ২০০৮ সালে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ভোট দিয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছর পর একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারণা অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনগুলো মানুষের মনে ভয় ও হতাশার জন্ম দিয়েছে।

এছাড়াও, সেনাবাহিনী মাঠে থাকা সত্ত্বেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যেমন প্রতিদিন ধর্ষণ, খুন ও গণপিটুনির মতো ঘটনা, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে নিষিদ্ধঘোষিত দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা। পাশাপাশি, বিচার বিভাগীয় সংস্কার এবং অন্যান্য সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হবে না বলে কিছু দলের বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি আরও বাড়াচ্ছে।

আলোচনায় নেতারা বাংলাদেশের অতীতের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা স্মরণ করেন, যেখানে শেখ মুজিবুর রহমান এবং মওলানা ভাসানীর মতো বিপরীত মতাদর্শের নেতারাও একে অপরের প্রতি ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখতেন। বর্তমানে সেই সংস্কৃতির অবক্ষয় ঘটেছে এবং রাজনৈতিক বিরোধিতা এখন ব্যক্তিগত শত্রুতা ও চরিত্র হননে পরিণত হয়েছে বলে তারা মত দেন।

No comments found