রাজনীতি কাদের জন্য,এ দেশের রাজনীতি কারা করছে?

(এস.এম আল আমিন হোসেন) স্টাফ রিপোর্টার ঢাকা  avatar   
রাজনীতি কাদের জন্য,এদেশের রাজনীতি কারা করছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী একটি প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়—রাজনীতি আসলে কোন শ্রেণীর মানুষের জন্য? সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, অধিকার ও ভবিষ্যতের সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি সম্পর্ক থাকলেও, অনেক সময় মনে হয় রাজনীতি যেন কেবল বিশেষ শ্রেণীর মানুষের হাতেই সীমাবদ্ধ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আদর্শভাবে রাজনীতি হওয়া উচিত সবার জন্য উন্মুক্ত—ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সব শ্রেণীর মানুষ যেন সমানভাবে অংশ নিতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্রে দেখা যায়, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী, প্রভাবশালী বা ক্ষমতাসীন শ্রেণীর মানুষই বেশিরভাগ সময় রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ কম থাকার অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, নিরাপত্তাহীনতা এবং সুযোগের সীমাবদ্ধতা।

গণতন্ত্রে রাজনীতি হওয়া উচিত জনগণের হাতে, জনগণের কল্যাণের জন্য। তবে এই মৌলিক ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে সব শ্রেণীর মানুষকে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশে এখন অনেক ভূঁইফোড় রাজনৈতিক দল দেখা যায়। 

"ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল" বলতে এমন রাজনৈতিক দলকে বোঝায় যেটি হঠাৎ করে জন্ম নেয়, কিন্তু যার কোনো দৃঢ় ভিত্তি, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা গণসমর্থন থাকে না। সাধারণত এসব দলের—

গঠনকাল: খুব স্বল্প সময়ে গঠিত হয়, অনেক সময় কোনো নির্দিষ্ট ইস্যু বা ব্যক্তিগত স্বার্থে।

ভিত্তি: তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন দুর্বল বা অনুপস্থিত।

গণসমর্থন: সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন জনপ্রিয়তা নেই, বেশিরভাগই কাগজে-কলমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়।

স্থায়িত্ব: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কয়েক মাস বা বছর টিকে থাকে, পরে বিলীন হয়ে যায় বা অন্য দলে মিশে যায়।

উদ্দেশ্য: অনেক সময় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ভোট ভাগাভাগি করা, অথবা কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য গঠিত হয়।

সংক্ষেপে, ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল হলো এমন এক ক্ষণস্থায়ী দল যার রাজনৈতিক ভিত্তি দুর্বল এবং জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা সীমিত।

গণতন্ত্র সঠিকভাবে চর্চা করতে হলে এমন রাজনৈতিক দল প্রয়োজন যার কাঠামো, নীতি ও আচরণ গণতান্ত্রিক আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এর জন্য একটি দলের মধ্যে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা জরুরি—

1. অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র:

দলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে, মনোনীত বা বংশগতভাবে নয়।

দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার মতামত বিবেচনা করা হবে।

২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা:

দলীয় অর্থনীতি (দানের উৎস, ব্যয়) প্রকাশ্যে ঘোষণা করা।

নেতাদের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখা।

3. সমান সুযোগ:

নারী, যুবক, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নেতৃত্বে আসার সুযোগ রাখা।

কেবল ধনী বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আধিপত্য না থাকা।

4. নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি:

ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, নীতি ও আদর্শভিত্তিক কর্মসূচি চালানো।

ক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলে—জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

5. সহিষ্ণুতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা:

দলীয় ভেতরে ভিন্নমত গ্রহণ করার সংস্কৃতি।

বিরোধী মতকে দমন না করে যুক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা।

6. তৃণমূলভিত্তিক শক্তিশালী সংগঠন:

শুধু শহরে নয়, গ্রাম-গঞ্জে সক্রিয় উপস্থিতি রাখা।

তৃণমূলের সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখা।

সংক্ষেপে, গণতন্ত্র চর্চার জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক দল—যেখানে নেতৃত্ব আসে জনগণের ভোটে, এবং ক্ষমতা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে।

বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনীতিতে বেশি সক্রিয় যে শ্রেণীর মানুষ, তাদের বৈশিষ্ট্য কয়েকটি দিক থেকে বোঝা যায়—

1. অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী শ্রেণী

ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, জমির মালিক ও ধনী উদ্যোক্তারা রাজনীতিতে বেশি যুক্ত হচ্ছেন।

রাজনীতিকে অনেকেই ব্যবসা সম্প্রসারণ ও প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।

2. ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট তরুণরা

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজভিত্তিক ছাত্র সংগঠন থেকে উঠে আসা নেতারা পরবর্তীতে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করছেন।

ছাত্ররাজনীতি এখন অনেক ক্ষেত্রে দলীয় বলপ্রয়োগ ও ক্ষমতার রাজনীতির প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।

3. পেশাজীবী-সংগঠনভিত্তিক ব্যক্তিরা

আইনজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রভাবশালী নেতারা সক্রিয় রাজনীতিতে আসছেন।

4. প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা

রাজনৈতিক পরিবার বা রাজনৈতিক বংশের সন্তান ও আত্মীয়রা সরাসরি নেতৃত্বে আসছেন।

📌 যা কম দেখা যায়

সাধারণ শ্রমজীবী, কৃষক, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সরাসরি অংশগ্রহণ এখন তুলনামূলকভাবে কম, কারণ তাদের জন্য রাজনৈতিক কাঠামোতে প্রবেশ ও টিকে থাকা কঠিন।

সংক্ষেপে, বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণে, আর তৃণমূল জনগোষ্ঠীর সরাসরি অংশগ্রহণ সীমিত।

কলাম: এস.এম আল-আমিন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার আই নিউজ বিডি 

No comments found