close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

রাহুলের 'তুই' সম্বোধনে উত্তাল ভারত, বিজেপির দ্বৈত নীতি নিয়ে প্রশ্ন..

Md Azhar Uddin avatar   
Md Azhar Uddin
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক নিয়ে রাহুল গান্ধীর এক 'তুই-তোকারি' মন্তব্য ভারতের রাজনীতিতে ঝড় তুলেছে। এর জবাবে বিজেপির সমালোচনার মুখে তাদের নিজেদের অতীত বক্তব্য নিয়েই প্র..

ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর এক বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে। সম্প্রতি এক জনসভায় রাহুল গান্ধী দাবি করেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি নরেন্দ্র মোদীকে 'তুই' সম্বোধন করে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেই নির্দেশ মোদী পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পালন করেন। রাহুলের এই আক্রমণাত্মক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ের মন্তব্য মুহূর্তেই জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, যা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বিজেপির পক্ষ থেকে মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল গান্ধীকে ভাষার শিষ্টাচার শেখানোর কথা বলেন। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভাষার ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলার নৈতিক অধিকার বিজেপির কতটা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অতীতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার লিংডো এবং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। "৫০ কোটির গার্লফ্রেন্ড" বা "জার্সি গরু"-র মতো মন্তব্যগুলো এখনও রাজনৈতিক বিতর্কে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এমনকি, প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে তার 'তুই-তোকারি' বা অনানুষ্ঠানিক সম্পর্কের কথা জনসমক্ষে বলেছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে, রাহুলের বক্তব্যের জন্য বিজেপির এত তীব্র প্রতিক্রিয়াকে অনেকেই দ্বৈত নীতি হিসেবে দেখছেন।

এই রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যেই আবার নতুন মাত্রা যোগ করেছেন যোগগুরু বাবা রামদেব। তিনি একদিকে কোকা-কোলা এবং অ্যাপলের মতো মার্কিন পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে স্বদেশী অর্থনীতির কথা বলছেন, অন্যদিকে কিছুদিন আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে 'সনাতন ধর্মের সমর্থক' এবং 'ভারতপ্রেমী' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান সরকারের অর্থনৈতিক নীতি নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। একদিকে যখন মার্কিন পণ্য বয়কটের কথা বলা হচ্ছে, তখন ভারত সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলার ওপর শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ বাড়িয়েছে এবং ৮৩০০ কোটি টাকার অস্ত্র কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করতে চলেছে।

এর পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা নীতি কঠোর করছে এবং অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজনের মতো বিশেষজ্ঞরা মার্কিন শুল্কের কারণে ভারতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের চাকরি হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই জটিল ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, শুধুমাত্র ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে মূল সমস্যাগুলো, যেমন—বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি এবং নির্বাচনী முறনায় অস্বচ্ছতার অভিযোগ, থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

রাহুল গান্ধীর তোলা 'ভোট চুরির' অভিযোগ এবং তার জবাবে বিজেপির ব্যক্তিগত আক্রমণ—দুইয়ে মিলে ভারতের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এক নতুন সংকটের মুখোমুখি, যেখানে নীতি ও আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুড়িই মুখ্য হয়ে উঠছে।

No comments found