বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহ-বন্দেগী ইউনিয়নের রহমতপুর, ফুলতলা ও আন্দিকুমড়া এই তিন গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। মাত্র দুই কিলোমিটার একটি রাস্তা। কিন্তু সেটি যেন দুর্ভোগের ফাঁদ। অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি, মিল-চাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও উঁচু জমি ভরাট করায় এলাকার রাস্তাঘাট নিচুর কারনে বছরের অন্তত আট মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে রাস্তাটি। ফলে হাঁটুপানি পেরিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্কুল-কলেজ, অফিস বা বাজারে যেতে হয় এই তিন গ্রামের বাসিন্দাদের। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় “শুকনো পায়ে হাঁটার দিন এখন তাদের স্মৃতি”।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরুয়া বটতলা মোড় থেকে দক্ষিণে রহমতপুর, ফুলতলা ও আন্দিকুমড়া পর্যন্ত দীঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার না করায় প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। সড়কের একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে ঘরবাড়ি, মিল-চাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনা। পাশাপাশি অনেক জায়গায় উঁচু জমি ভরাট করায় ঘরবাড়ি, মিল-চাতালের পানি এসে রাস্তায় জমে থাকে। বছরের অন্তত আট মাস এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকে। মাসের পর মাস পানিবন্দি অবস্থায় রাস্তা ডুবে থাকে। বর্ষা মৌসুমে রাস্তার পাশাপাশি ঘরবাড়ি ডুবে যায়, যার ফলে নানাবিধ সমস্যা ও রোগবালাইয়ের সম্মুখীন হতে হয় এলাকাবাসীকে।
মোকাল্লেম হোসেন, আশরাফ আলী, ওমর আলীসহ ১০ জনের অধিক ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, একদিকে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কার হয়না। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি, মিল-চাতালসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ এবং উঁচু জমি ভরাট করার কারণে আশপাশের রাস্তাগুলো নিচু হয়ে পড়েছে। এর ওপর বৃষ্টি হলে পানি জমে গিয়ে রাস্তাঘাট ডুবে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি সরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। ফলে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ছে।
রহমতপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, একটা সময় ছিলো যখন এ রাস্তা দিয়ে শুকনো পায়ে হেঁটে যাওয়া যেত। এখন সবসময় হাঁটুপানি। ছোট ছোট বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো যায় না।শাকিব ও ইসমাইল হোসেন বলেন, যোগাযোগে সুবিধাজনক স্থানে হলেও অব্যবস্থাপনার কারণে তারা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছে। তারা আরো বলেন, এ গ্রামগুলো শেরপুর পৌর শহরের সন্নিকটে এবং অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।
শাহ-বন্দেগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা কাজী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি রাস্তা ও গ্রামে পানি নিষ্কাশনের কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেই। ইতিমধ্যে আমরা জরিপ করেছি, দ্রুতই ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশিক খান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। দ্রুত পানি নিস্কাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যারা অপরিকল্পিতভাবে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।