close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

পটুয়াখালীতে বিচারকের বিরুদ্ধে পিপির পাল্টা অভিযোগ: সিন্ডিকেটের দাবী..

জাকারিয়া রানা avatar   
জাকারিয়া রানা
জাকারিয়া রানা
জেলা প্রতিনিধি
পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন সরকারি কৌঁসুলি রুহুল আমিন।..

পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিলুফার শিরিনের বিরুদ্ধে এবার পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন। তার অভিযোগ, বিচারক নিলুফার শিরিন আদালতকে ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করছেন এবং ঘনিষ্ঠ আইনজীবী ও কোর্টকর্মচারীদের নিয়ে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। পিপির মতে, এই সিন্ডিকেটের স্বার্থে বাধা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পিপি রুহুল আমিন বিচারকের বাসায় টাকার খাম পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে রুহুল আমিন একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠিয়ে দাবি করেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। তিনি বলেন, "আমি কখনোই বিচারকের বাসার কাজের মহিলার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি, এমনকি মোবাইলে ঘুষের কোনো প্রস্তাবও দিইনি।"

 

রুহুল আমিন আরও অভিযোগ করেন যে বিচারক নিলুফার শিরিন কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আইনজীবী ও কোর্টের কর্মচারীদের নিয়ে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট পরিচালনা করছেন। পিপির দাবি, মামলার জামিন, খালাস কিংবা অব্যাহতির আদেশ অনেক সময় আদালতের বাইরে, বিচারকের বাসায় বসেই দেওয়া হয়।

 

রুহুল আমিনের অভিযোগ, বিচারক নিলুফার শিরিন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিমের ঘনিষ্ঠজন। তার বাবা একসময় পটুয়াখালীতে সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন এবং তিনি পটুয়াখালী শেরে বাংলা স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেই সূত্রে স্থানীয় আইনজীবীদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি আদালতের ভেতরে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর জেলা জুড়ে পিপি-জিপি নিয়োগকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবী ফোরামের একাংশ তখন তার নিয়োগের বিরুদ্ধে মাঠে নামে। বিক্ষোভ, মিছিল এমনকি হামলার শিকার হন তিনি। তার চেম্বারে ভাঙচুর চালানো হয়, ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে। সেই সময় থেকেই একটি মহল তাকে দমানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, "বিচারক মহোদয়ও এখন তাদের সঙ্গে মিলে আমাকে একঘরে করার ষড়যন্ত্র করছেন।"

 

পিপি আরও অভিযোগ করেন, বিচারক নিলুফার শিরিন চাঞ্চল্যকর লামিয়া ধর্ষণ মামলায় আসামিদের ব্যাপক সুবিধা দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় তাকে উল্টো ধমক দেওয়া হয়। চার্জশিট আসার পর আসামী ইমরান মুন্সিকে বাঁচাতে তাকে ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করতে চাপ দেওয়া হয়। এছাড়াও বিগত দিনে নারী ও শিশু মামলা নং- ১৪৫/২৫ ধারা ১১(গ)/৩০ মামলায় একজন পর্দাশীল বিচার প্রার্থী মহিলাকে খাস কামরায় নিয়ে পুলিশ ডেকে চর থাপ্পড় মারেন। এমনকি ওপেন কোর্টে হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলেও দাবি তার।

 

অন্যদিকে আদালতে নিয়মিত না বসা, বৃহস্পতিবার কোর্ট না করা, সাক্ষীদের বয়ান গ্রহণে গড়িমসি, বিচার প্রার্থীদের নিকট থেকে শাক, সবজি, মাছ, মাংসসহ বিভিন্ন উপঢৌকন গ্রহণের অভিযোগও তুলেছেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, "আমি এগুলোর প্রতিবাদ করিলে বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় আমার উপরে প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন। আমাকে এজলাস চলাকালীন সময়ে অন্যান্য আইনজীবীদের সামনে বিভিন্ন রকম তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করিয়া কথাবার্তা বলিয়া আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করেন। আমি অত্যন্ত ধৈর্য এবং সহনশীলতার সাথে আমার উপরের অর্পিত রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করার চেস্টা চালিয়ে যাই।"

 

বিচারককে সু-পথে ফিরিয়ে আনতে ডক্টর মিজানুর রহমান আজহারীর এক নজরে কুরআন বইটি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন বলে জানান রুহুল আমিন। তিনি বলেন, "সেহেতু সে একজন কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী মানুষ তাই এটাকে সে ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে নাই।"

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপি অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেন, "আমি পিপি হওয়ার পর থেকেই একটি মহল বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে মিছিল করেছে, চেম্বার ভাঙচুর করেছে, আমাকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিজ্ঞ বিচারকও। নারী শিশু কোর্টের পেশকার, তার ভাই একজন আইনজীবী এবং বিচারকসহ সিন্ডিকেটভুক্তরা বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে আমাকে একমাত্র প্রতিবন্ধক হিসেবে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত চাই।"

এই বিষয়ে বিচারক নিলুফার শিরিনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে আদালত ও সংশ্লিষ্ট মহল আরও তদন্ত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ধরনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

 

 

No comments found