নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মোট ১৫৬টি অনুমোদিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পনদের মধ্যে বর্তমানে ৯৭টি পদ শূন্য। এতে একদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে পাঠদানের মানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শূন্য থাকা ৯৭টি পদের মধ্যে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ২৯ জন। মামলা-জনিত কারণে ১৩টি পদে নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। ফলে কার্যত ৫৫টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এই ৫৫টি শূন্য পদের মধ্যে ৪৮টি পদ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণযোগ্য এবং ৭টি পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণযোগ্য।
পাঁচ বছর আগে সহকারী শিক্ষক থেকে চলতি দায়িত্বে দেওয়া ২৯ জন প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগ এখনও হয়নি। ফলে নতুন সহকারী শিক্ষক নিয়োগও আটকে গেছে। এছাড়া জাতীয়করণ হওয়া কিছু বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে দায়ের করা রিট মামলার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত রয়েছে। বর্তমানে চলতি দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
নাগরপুর উপজেলার একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পালাক্রমে ক্লাস নিতে হচ্ছে। এতে শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ সামলাতে গিয়ে শিক্ষার্থীরাও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, “প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাস নেওয়া এবং অফিসের কাজ সামলাতে হয়। ফলে কোনো কাজই ঠিকমতো করা সম্ভব হচ্ছে না।”
অভিভাবকরাও শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন অভিভাবক বলেন, “প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও পাঠদানের মান কমে গেছে। দ্রুত পদ পূরণ না হলে প্রাথমিক শিক্ষার মান আরও নিচে নেমে যাবে।”
নাগরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অশোক কুমার বলেন, “বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ৫৫টি শূন্যপদের কারণে সহকারী শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। একসঙ্গে পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজ সামলাতে গিয়ে শিক্ষকদের সমস্যা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পদ পূরণ হবে। তবে মামলার জটিলতা ও প্রশাসনিক কারণে প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।”