close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

অনলাইন জুয়ার ভয়াল থাবা: 'ক্যাসিনো রাজধানী' মেহেরপুর, নেপথ্যে প্রভাবশালী চক্র!..

আই নিউজ বিডি জাতীয় avatar   
আই নিউজ বিডি জাতীয়
অনুসন্ধানে দেখা যায়, একসময়কার শান্ত জেলা মেহেরপুর এখন অনলাইন জুয়ার 'রাজধানী' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম।..

দেশজুড়ে অনলাইন জুয়ার এক ভয়ংকর কালো জগৎ গড়ে উঠেছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুর। প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে, আর এই টাকার খেলায় নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো তরুণ। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ভয়াবহ চিত্র, যেখানে রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং প্রশাসনের উদাসীনতায় অনলাইন ক্যাসিনোর এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, একসময়কার শান্ত জেলা মেহেরপুর এখন অনলাইন জুয়ার 'রাজধানী' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এই নেটওয়ার্কের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম। অভিযোগের আঙুল উঠেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর দিকেও, যিনি এই সাম্রাজ্যের দেখভাল করতেন বলে জানা গেছে। তার অধীনেই মেহেরপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন মিলু এবং জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুস সালাম বাথননের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই অবৈধ कारोबार নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই চক্রের কাজ করার ধরণ অত্যন্ত আধুনিক ও ধূর্ত। '1xBet'-এর মতো আন্তর্জাতিক বেটিং সাইটগুলোকে ব্যবহার করে প্রথমে তরুণদের আকৃষ্ট করা হয়। লেনদেনের সুবিধার্থে ডলারের পাশাপাশি বিকাশ ও নগদের মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যবহার করা হচ্ছে। জুয়াড়িদের ফাঁদে ফেলার জন্য প্রথমে ছোট ছোট অঙ্কের টাকা জিতিয়ে দেওয়া হয়, পরে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করা হয়। একবার এই চক্রে জড়িয়ে পড়লে সেখান থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব।

এই জুয়ার নেশায় পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়ার করুণ কাহিনীও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। চুয়াডাঙ্গার এক ভুক্তভোগী জানান, তিনি প্রথমে অল্প কিছু টাকা জিতে লোভে পড়ে যান এবং এক রাতেই ১৭ লক্ষ টাকা হারান। পরবর্তীতে প্রায় ৩ কোটি টাকা হারিয়ে বাড়ি বন্ধক রাখতে বাধ্য হন এবং আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। এমন অসংখ্য তরুণের জীবন এই অনলাইন জুয়ার কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

আশ্চর্যজনকভাবে, এই বিশাল অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন খোদ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাই। একজন সাবেক সার্কেল এসপি জানান, এই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করায় তাকে বদলি করে দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এমনকি সাংবাদিকরাও এই চক্রকে আড়াল করতে সহায়তা করছেন।

জুয়া থেকে অর্জিত কোটি কোটি টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিটিআরসি-এর মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিয়েও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনকে আরও কঠোর করে অনলাইন জুয়াকে সুস্পষ্টভাবে অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং অবৈধ সাইট ও অ্যাপগুলো নিয়মিত বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায়, এই ডিজিটাল মাদক দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে এবং দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে ফেলবে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।

No comments found