রিপোর্ট মেহেদী হাসানঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে, ধীরগতির উন্নয়ন প্রকল্পে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
নরসিংদী সদর উপজেলার নুরালাপুর ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরম অবনতিতে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত রাস্তাঘাট ও বন্ধ হয়ে যাওয়া সেতু নির্মাণের কারণে একদিকে যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সড়ক ব্যবস্থার অবস্থা করুণ। বছরের পর বছর সংস্কারের অভাবে রাস্তা পরিণত হয়েছে খানাখন্দে ভরা ঝুঁকিপূর্ণ পথে। বর্ষা মৌসুমে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়—কাঁদা ও পানি জমে যান চলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন কৃষক, শিক্ষার্থী ও রোগীরা। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রেও চরম বিপত্তি দেখা দেয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৫ বছরে কোনো টেকসই উন্নয়ন হয়নি। যেসব রাস্তা সংস্কার হয়েছে, সেগুলোর কাজও ছিল নিম্নমানের—সংস্কারের কয়েক দিনের মধ্যেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ইউনিয়নটিকে বিভক্ত করেছে। নদীর উপর একাধিক সেতু ভেঙে যাওয়ায় অন্তত ১৪টি গ্রামের মানুষ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য নুরালাপুর বাজার, ইউনিয়ন পরিষদ বা স্কুলে যাওয়া এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ।
বিশেষত নুরালাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতুর নির্মাণ কাজ ছয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। তিনবার ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলেও কেউ কাজ শেষ করেননি। নদীর ওপারে বসবাসকারী বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০% শিক্ষার্থীর জন্য নিয়মিত স্কুলে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ব্রিজ নির্মাণের অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ভবন ভেঙে ফেলা হয়। কাজ শুরুর কিছুদিন পরই নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ করে চলে যায়। ফলে স্কুল ভবনের নিচের মাটি সরে গিয়ে পুরো ভবন ধসের ঝুঁকিতে পড়ে। সাময়িক মেরামত করা হলেও কিন্তু এখন বিদ্যালয়ের দুইতলা ও তিনতলা ভবন ঝুঁকিপূর্ণ সংকট কাটেনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফেরদৌস কামাল বলেন, “প্রতিদিন এক হাজার শিক্ষার্থী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। আলগী বাজার ও গদাইরচরের আরও একটি সেতুর পাশে রয়েছে মাদ্রাসা, এতিমখানা ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পারাপার করছে ভঙ্গুর কাঠামোর ওপর দিয়ে।
গদাইরচর থেকে আলগীবাজার পর্যন্ত সড়কের কাজ ধীরগতিতে চলছে। এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদার নাজমুল শুরুতে কাজ শুরু করলেও এখন তিনি এলাকাতেই আসছেন না। অথচ এলজিইডি ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় রাস্তার মাপজোখ ও প্রস্থ বাড়ানোর কাজ শেষ হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, “আমার ইউনিয়নের প্রতিটি রাস্তাই বেহাল। বারবার এলজিইডি ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। ব্রিজের কাজ তিনবার শুরু হয়ে আবার থেমে গেছে। এখন নতুন করে রি-টেন্ডার হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি এলজিইডির প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি— জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বিবেচনা করে যেন দ্রুত রাস্তাঘাট ও সেতুগুলোর কাজ সম্পন্ন করা হয়।”
নুরালাপুর ইউনিয়নের এই বাস্তবতা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা, যোগাযোগ ও জনস্বাস্থ্যের এই সংকট এখনই সমাধান না হলে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এলাকাবাসী সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ এবং দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন।