নোয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেন হাফেজ মাওলানা বেলাল হোসেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই জানাজায় উপচে পড়া ভিড়, এলাকা জুড়ে শোকের ছায়া।
নোয়াখালীর মাইজদীতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন জামায়াতে ইসলামীর স্থানীয় ইউনিটের প্রভাবশালী নেতা ও প্রবীণ আলেম হাফেজ মাওলানা মো. বেলাল হোসেন (৬৫)। বুধবার (৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে একটি দ্রুতগামী অ্যাম্বুলেন্স তাকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন।
দুর্ঘটনাটি ঘটে সদর উপজেলার মাইজদী শহরের রশিদ কলোনী জামে মসজিদের সামনে ফোরলেন সড়কে। এ সময় রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন হাফেজ বেলাল হোসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, অ্যাম্বুলেন্সটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল এবং চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি তাঁকে ধাক্কা দেয়। সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। দুর্ভাগ্যবশত, ঢাকা নেয়ার পথে রাত আনুমানিক ৩টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
হাফেজ বেলাল হোসেন ছিলেন রশিদ কলোনী জামে মসজিদের দীর্ঘ ৩৫ বছরের পেশ ইমাম। তিনি শুধু একজন ধর্মীয় নেতা নন, বরং এলাকার সামাজিক কর্মকাণ্ডেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতেন। পাশাপাশি, তিনি জামায়াতে ইসলামীর রশিদ কলোনি ইউনিটের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তার বাড়ি নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের পশ্চিম শিবপুর গ্রামের আমিন মার্কেট সংলগ্ন শাহাপুর এলাকায়। এলাকাবাসী তাকে একজন সৎ, ধর্মভীরু এবং সদালাপী মানুষ হিসেবে জানতেন।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেলে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় মাইজদীর রশিদ কলোনী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। জানাজায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা দলে দলে এসে জানাজায় অংশ নেন।
জানাজায় উপস্থিত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, “আমি ভাবতাম হুজুর একদিন আমার জানাজা পড়াবেন। আজ আমি তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছি। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”
জামায়াতে ইসলামীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আমির মো. হাসানুজ্জামান বলেন, “হাফেজ সাহেব ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। তার মৃত্যুতে আমরা একজন সত্যিকারের পথপ্রদর্শক হারালাম।”
হাফেজ বেলাল হোসেনের জানাজায় হাজারো মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিল, তিনি ছিলেন সবার প্রিয়, শ্রদ্ধাভাজন ও নিরহংকারী একজন আলেম। তার মৃত্যুতে রশিদ কলোনী এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শোকের ঢল নেমেছে। অনেকেই তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে পোস্ট দিচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিনি ছিলেন অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপনকারী একজন পরহেজগার মানুষ।
তার এই অকাল মৃত্যুতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, রাজনীতিক, ও সাধারণ মানুষ সবাই গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।