শিহাবুল ইসলাম শাহেদ , নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়:জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে প্রক্সি জালিয়াতি চক্রের দুই সদস্য ও এক ভর্তিচ্ছুকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আটককৃতদের পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
আটককৃত চক্রের সদস্যরা হলেন— মো. পনির উদ্দিন খান পাভেল (বিক্রমপুর, ঢাকা) এবং সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম (চরপাড়া, ময়মনসিংহ)। সিয়াম জাককানইবির আইন ও বিচার বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি পাভেলের সঙ্গে আর্থিক চুক্তির ভিত্তিতে এক ভর্তিচ্ছুর হয়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেন।
প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান আফিক (জিএসটি ভর্তি রোল: ২০১৬৯৭, মেরিট: ৭৬) স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE) বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি হতে এলে আফিককে সন্দেহজনক মনে হয় ভর্তি কমিটির সদস্যদের। সাক্ষর পরীক্ষা ও মৌখিক প্রশ্নে ব্যর্থ হলে তার অভিভাবক ডাকার অনুরোধ করা হয়। পরে ‘বড় ভাই’ পরিচয়ে পাভেল উপস্থিত হন। তাদের কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে আফিকের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চেক করে ভর্তি সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ মেলে।
পাভেলের আইফোনে ব্যাংক, বিসিএস, বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, প্রার্থীদের ছবি এবং একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সন্ধান পাওয়া যায়—যেখানে বিসিএস ক্যাডারসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যুক্ত ছিলেন। তবে ফোনটি হঠাৎ লক হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় পাভেলের ফোনে সিয়াম নামের এক ব্যক্তির কল আসে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেজে অনুসন্ধান করে জানা যায়, সিয়াম জাককানইবির আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেন যে, তিনি ১ লাখ টাকা চুক্তিতে কৌশিক কুমার চন্দ্র নামে এক শিক্ষার্থীর হয়ে প্রক্সি দেন।
প্রশাসন জানিয়েছে, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে আসছে। চক্রটি পরিচালনা করছেন গাজীপুরের টঙ্গীর বাসিন্দা বাবু ভাই। তদন্তে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততারও প্রমাণ মিলেছে।
এই চক্রের মাধ্যমে জাককানইবির লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে কৌশিক কুমার চন্দ্র (জিএসটি রোল: ২০৪৩৯৩) এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE বিভাগে পূণ্য দে মৃধু ভর্তি হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আফিক ও পূণ্য দে মৃধুর বদলে কে প্রক্সি দিয়েছেন, তা এখনও শনাক্ত হয়নি।
CSE বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. সুজন আলী বলেন,"পাভেলের ফোনে আমরা বিসিএস ক্যাডারসহ বড় বড় ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি। ফোন আনলক করা গেলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান,“আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি প্রস্তাব করেছি। আগামী রবিবার তা ঘোষণা করা হবে।এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো চক্রের সন্ধান বের করার চেষ্টা চলবে। আশা করি তদন্তের মাধ্যমে বিষয়গুলো উঠে আসবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রক্সি পরীক্ষাগুলো জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে সম্পন্ন হয়েছে।
শিহাবুল ইসলাম শাহেদ
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
০১৬১৮০০৮৬৭৯