জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নদী ভাঙনের কারণে অসংখ্য মানুষ তাদের বসতভিটা এবং ফসলি জমি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দশানী, জিঞ্জিরাম ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এ ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। নদীর পানি বাড়লেই যেমন ভাঙন দেখা দেয়, তেমনি পানি কমলেও এই ভাঙনের তীব্রতা বাড়ে। গত কয়েকদিনের মধ্যে মেরুরচর, নিলাক্ষিয়া এবং সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আউলপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুস, ফারুক, শেখেরচর গ্রামের রিপন মিয়া ও কুশলনগর গ্রামের জহুরুল হক জানান, তারা বারংবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে এবং পুনরায় বসতভিটা হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। তারা ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
স্থানীয়দের মতে, তারা বারংবার ভাঙনের শিকার হলেও ত্রাণ বা ক্ষতিপূরণ পেয়ে কোন সুরাহা হচ্ছে না। বরং নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন তারা। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ইয়াকুব আলী, শহিদ মিয়া, কবিরুল ইসলাম জানান, তারা এতবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যে নতুন করে বসতভিটা তৈরি করার সামর্থ্যও তাদের নেই।
মেরুরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, 'উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে মেরুরচর সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়ে। আমরা দ্রুত ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।'
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নকিবুজ্জামান খান জানান, 'নদী ভাঙন রোধে প্রকল্পনুযায়ী বেশ কয়েকটি জায়গায় কাজ হয়েছে। নদীতে পানি বেশি থাকার কারণে সময়মতো কাজ করা যাচ্ছে না। তবে প্রকল্প অনুমোদন সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। স্থানীয় জনগণ সরকারের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানাচ্ছে, যা তাদের নিরাপত্তা এবং জীবিকার স্থায়িত্ব নিশ্চিত করবে।
নদী ভাঙনের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে, ভবিষ্যতে আরও বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে। নদী ভাঙন রোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহণ এবং দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।