সত্যজিৎ দাস:
পাহাড়ি খরস্রোতা মনু নদী ঘিরে মৌলভীবাজারের জনজীবন বহুদিন ধরেই বন্যা, নদীভাঙন ও দুর্বল অবকাঠামোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বহু প্রত্যাশিত ‘মনু নদী তীর সংরক্ষণ ও প্রতিরক্ষা প্রকল্প’ একনেকের অনুমোদন পেয়েছিল ২০২০ সালে। বিশাল ব্যয়ের এই প্রকল্পে শুরুতে আশার আলো দেখা গেলেও, পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ভূমি মালিকরা। অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে,আর শহরের মানুষ রয়েছে নতুন বন্যা ও নদীভাঙনের আশঙ্কায়।
৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার মনু প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি এখনো মাত্র ৫৪ শতাংশ। এখন সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্ষায় ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা বৃষ্টিতে এই নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়,বিশেষ করে মৌলভীবাজার সদর,রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলায়।
ভূমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ না হওয়ায় শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ, চর অপসারণ ও নদীতীর বাঁধ নির্মাণের অনেক অংশ থেমে আছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পেতে সময় লেগেছে। ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর অনুমোদন দেওয়া হলেও, ৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এখনও প্রাপ্যদের হাতে পৌঁছায়নি।
ভূমির মালিকরা বলছেন,তাঁরা প্রায় দুই বছর ধরে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু জমির টাকা না পাওয়ায় তাঁরা নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নদীতীরেই বসবাস করছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউআইএ সিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ব্লক নির্মাণের ৮০ শতাংশ প্রস্তুত থাকলেও জমি বুঝে না পাওয়ায় তারা কাজ শুরু করতে পারছে না। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতিও বাড়ছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলিদ বলেন,“ভূমি অধিগ্রহণের পুরো অর্থ এখনো হাতে আসেনি। প্রাপ্ত অর্থ দ্রুত বিতরণের চেষ্টা করছি।” জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন আশ্বাস দিয়েছেন,“ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে।”
নদীপাড়ের মানুষের এখন একটাই দাবি-প্রকল্পটি যেন দ্রুত শেষ হয় এবং ক্ষতিপূরণের টাকা যেন যথাসময়ে দেওয়া হয়,যাতে তারা নিরাপদে পুনর্বাসিত হতে পারে। নইলে, বর্ষার ভয়াবহতা ও নদীভাঙনে মৌলভীবাজারের শহর ও জনপদ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে,এমন আশঙ্কাই এখন স্থানীয়দের কণ্ঠে।