ময়মনসিংহ: চলতি বছরের ৮ এপ্রিল একই দিনের দুটি পাতায় হুবহু এক প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে ময়মনসিংহের ১১টি স্থানীয় সংবাদপত্রের ঘোষণাপত্র (ডিক্লারেশন) বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার এই আদেশ জারি করা হলেও রোববার ও সোমবার সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পৌঁছানো হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘোষণাপত্র বাতিল হওয়া পত্রিকাগুলো হলো, দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ, দেশের খবর, বিশ্বের মুখপত্র, ঈষিকা, অদম্য বাংলা, আলোকিত ময়মনসিংহ, দিগন্ত বাংলা, জাহান, কিষানের দেশ, হৃদয়ে বাংলাদেশ এবং সাপ্তাহিক পরিধি।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) উম্মে হাবীবা মীরা বলেন, “ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধন) আইনের একাধিক ধারা লঙ্ঘন করে পত্রিকাগুলো প্রকাশিত হচ্ছিল। ডিক্লারেশনে উল্লেখিত ছাপাখানার বাইরে অনুমোদনহীন স্থানে মুদ্রণও চলছিল। আইন ভঙ্গের কারণেই তাদের ঘোষণাপত্র বাতিল করা হয়েছে।”
এর আগে ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১৩টি সংবাদপত্রকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। নোটিশে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। পরে দুইটি পত্রিকা, দৈনিক সবুজ ও নিউ টাইমস, সঠিক অনুমতি ও ব্যাখ্যা জমা দেওয়ায় তাদের ঘোষণাপত্র বহাল রাখা হয়, বাকি ১১টির ডিক্লারেশন বাতিল হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ছাপাখানার স্থান পরিবর্তনের আগে অনুমোদন নিতে হয়। ১৩টি পত্রিকার মধ্যে দুইটি অনুমতি নিয়েছিল, বাকিরা নেয়নি। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিক্লারেশন বাতিলের চিঠি বৃহস্পতিবার জারি হলেও সোমবার বিকেল পর্যন্ত ছয়টি পত্রিকা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই চিঠি গ্রহণ করেছে।
দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দিগন্ত বাংলা সম্পাদক আ.ন.ম. ফারুক জানান, “এখনো হাতে চিঠি পাইনি। পাওয়ার পর করণীয় ঠিক করব।”
দৈনিক দেশের খবর সম্পাদক এফ. এম. এ. ছালাম বলেন, “আমাদের যদি রিভিউ করার সুযোগ থাকে, করব; না হলে হাইকোর্টে যাব।”
ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীন সংবাদপত্র দৈনিক জাহান ১৯৮০ সালে হাবিবুর রহমান শেখের সম্পাদনায় যাত্রা শুরু করে। পত্রিকাটির বর্তমান নির্বাহী সম্পাদক হাসিম উদ্দিন বলেন,
“আমাদের ছাপাখানার মেশিনে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সাময়িকভাবে অন্য ছাপাখানা থেকে পত্রিকা ছাপাচ্ছিলাম। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। নতুন মেশিন বসানোর কাজ চলছে। এর মধ্যেই ডিক্লারেশন বাতিলের খবর পেলাম। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।”
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী এসব সংবাদপত্র চাইলে ঘোষণাপত্র বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক রিভিউ বা আদালতে আপিল করতে পারবে।
ময়মনসিংহের স্থানীয় সাংবাদিক মহলে ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এতে পেশাদার সাংবাদিকতা আরও দায়িত্বশীল হবে, আবার অনেকে মনে করছেন, প্রশাসনের এ পদক্ষেপে স্থানীয় সংবাদপত্রের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।