লালমনিরহাটে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহাসিক নিদাড়িয়া মসজিদ

Akm Kaysarul Alam avatar   
Akm Kaysarul Alam
এ কে এম কায়সারুল আলম, লালমনিরহাট করেসপন্ডেন্টঃ

লালমনিরহাটের প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন নিদাড়িয়া মসজিদ আজ ধ্বংসের মুখে। শিলালিপি অনুযায়ী, ১১৭৬ হিজরি সনে মুঘল সুবেদার মাসুদ খাঁ ও তাঁর ছেলে মনছুর খাঁর তত্ত্বাবধানে এই মসজিদ নির্মিত হয়। মসজিদের গঠনশৈলীতে মুঘল স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। তবে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এতে ফাটল দেখা দিয়েছে, যে কোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রায় ৪২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৬ ফুট প্রস্থের এক কক্ষবিশিষ্ট এই মসজিদের উপরিভাগে রয়েছে তিনটি গম্বুজ, চার কোণায় চারটি পিলার এবং সামনের দিকে একটি প্রবেশদ্বার। প্রবেশপথের পাশে একটি দোচালা ঘর আছে, যা অনেকে ইমামের আবাসস্থল বা স্টোররুম বলে মনে করেন। মসজিদের সামনে প্রশস্ত ইদগাহ, উত্তরপূর্ব কোণে কবরস্থান এবং পাশেই একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।

মসজিদের পাশের একটি কবরকে অনেকে প্রতিষ্ঠাতা মনছুর খাঁর কবর বলে মনে করেন। জনশ্রুতি আছে, দাঁড়ি না থাকার কারণে ফারসি শব্দ থেকে মসজিদের নামকরণ হয় ‘নিদাড়িয়া মসজিদ’। মনছুর খাঁ মসজিদের নামে প্রায় ১০ একর জমিও দান করেছিলেন।

মসজিদের খতিব হাফেজ মোহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, স্থানীয়দের বিশ্বাস—মনছুর খাঁ দাঁড়ি গজানোর মানত করেছিলেন। পরে দাঁড়ি উঠলে তিনি মসজিদ নির্মাণ করেন। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. হোসেন আলী বলেন, “মসজিদটি এখন ভগ্নদশায়। ছাদে ফাটল ধরেছে, জায়গা সংক্রান্ত সমস্যাও রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় অনুমতি ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়। পাশাপাশি দানকৃত জমির বড় অংশ দখল হয়ে আছে।”

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় চার শতাব্দী পুরোনো এই মসজিদ একসময় সরকারি উদ্যোগে আংশিক সংস্কার করা হয়েছিল। এরপর থেকে আর তেমন নজরদারি নেই।

রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের বড়বাড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কিশামত নগরবন্দ মৌজায় অবস্থিত মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রাচীন স্থাপনা।

দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণকারী মুসল্লিরা নিয়মিত এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন। তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এ স্থাপনা আজ নষ্ট হওয়ার পথে। মসজিদের সংস্কার ও জমি-সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

No comments found