close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

কুড়িগ্রাম ঘোগাদহে নানা বাধা ও প্রতিবাদের পরও থেমে নেই গণশৌচাগার নির্মাণ..

Nayon Das avatar   
Nayon Das
নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের ঘোগাদহ বাজারে নানা প্রতিবাদ, অভিযোগ ও মানববন্ধনের পরও থেমে নেই গণশৌচাগার নির্মাণের কার্যক্রম। ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী ও সাধারণ মানুষ সরবভাবে বিরোধিতা করলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কার্যকর হস্তক্ষেপ না থাকায় বাজারের ভেতরেই চলছে শৌচাগার নির্মাণকাজ। এতে পরিবেশ দূষণ, দুর্গন্ধ ও বাজারের সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ ধ্বংসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কাঁচামাল ও মুদি দোকান থেকে শুরু করে চিকিৎসা চেম্বার, এমনকি বড় দুটি ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেটও এই গণশৌচাগারের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন—শৌচাগার নির্মাণ শেষ হলে বাজারের অন্তত ২০টি দোকান অকেজো হয়ে যাবে। চারপাশের দুটি মার্কেটে অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ী জীবিকা হারাবেন।

ব্যবসায়ী আইনুল হক, মনজু মিয়া ও রনজু মিয়া বলেন, “আমরা প্রতিদিন কাঁচামাল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি। দোকানের একেবারে গায়ে যদি শৌচাগার নির্মাণ হয়, দুর্গন্ধে ক্রেতারা আর আসবে না। আমরা তো পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে বসব।”

শুধু ব্যবসায়ীরাই নয়, চিকিৎসকরাও ক্ষুব্ধ। হোমিও চিকিৎসক জিয়াউর রহমান এবং পল্লী চিকিৎসক আব্দুল আলিম ও আব্দুল বারেক বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে এই বাজারে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি। এখন আমাদের চেম্বারের সামনে শৌচাগার বানানো হচ্ছে। দুর্গন্ধে রোগীরা তো আসবেই না, আমরাও বসতে পারব না। এতে মানুষের স্বাস্থ্যসেবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের মতো জনবহুল স্থানে শৌচাগার নির্মাণ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য উভয় ক্ষেত্রেই মারাত্মক হুমকি। অথচ বাজারের বাইরের নির্ধারিত বা খালি জায়গায় শৌচাগার তৈরি করলে সমস্যার সমাধান হতো।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী একাধিকবার উপজেলা প্রশাসন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পর প্রশাসনিক দপ্তর থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করা হয় এবং বাজারের ভেতরে শৌচাগার নির্মাণ বন্ধ করে বিকল্প স্থানে করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে—চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত প্রভাব ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাজারের ভেতরেই নির্মাণকাজ জোরপূর্বক চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

বাজারের মার্কেট মালিক আব্দুল ওয়াব খন্দকার বলেন, “হিংসা থেকে আমাদের মার্কেট ধ্বংসের জন্যই বাজারের ভেতর শৌচাগার বানানো হচ্ছে। এতে প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী বেকার হয়ে যাবে। নানা বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও দলীয় প্রভাব আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরব সমঝোতায় নির্মাণকাজ জোরেশোরে এগিয়ে চলছে।”

এলাকাবাসীর দাবি, বাজারের বাইরে মাটি ভরাট করে নির্ধারিত স্থানে শৌচাগার তৈরি করা হলে বাজারের পরিবেশ রক্ষা পেত এবং সবাই উপকৃত হতো। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে তা উপেক্ষা করা হচ্ছে।

ঘোগাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মাস্টার বলেন, “বাজারের উন্নয়নের জন্যই শৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। ভালো কিছু পেতে হলে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। এবিষয়ে আমার তেমন কিছু জানা নেই। তবে পূর্বের কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি—এটি নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণ হচ্ছে এবং এটি উন্নয়নমূলক কাজ। কিছু মানুষের সমস্যা হতে পারে, তবে এটি জনগণের স্বার্থে করা হচ্ছে।” পরে তিনি যোগ করেন, “তবুও আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখব।”

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, উন্নয়নের নামে জনগণের ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ ও জীবিকা ধ্বংস কোনোভাবেই উন্নয়ন নয়। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানিয়েছেন—যদি দ্রুত বিকল্প স্থানে শৌচাগার নির্মাণ না করা হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে তারা বাধ্য হবেন।

No comments found