close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

কিশোরগঞ্জে শিকলবন্দী ভাই-বোনের মানবেতর জীবন: চিকিৎসায় সহায়তার উদ্যোগ..

Sayed Aliuzzaman Mohsin avatar   
Sayed Aliuzzaman Mohsin
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শিকলবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপনকারী আছমা ও জাহাঙ্গীরের চিকিৎসার উদ্যোগ নিল উপজেলা প্রশাসন।..

বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলায় এক দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরে। আছমা খাতুন (২৮) এবং তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর (২৫) প্রায় এক দশক ধরে শিকলবন্দী অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে তারা শিকলে বাঁধা অবস্থায় থাকলেও এতদিন অর্থাভাবে কোন চিকিৎসা পেতে পারেননি। তবে সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আছমা ও জাহাঙ্গীরের বাবা ফজলু মিয়া, একজন দরিদ্র দিনমজুর, তাদের জীবনযাপনের খরচ বহন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফজলু মিয়া জানান, তাদের মেয়ে আছমা মাত্র ১৫ বছর বয়সে গার্মেন্টসে কাজ শুরু করে কিছু টাকা জমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই টাকা আত্মসাৎ হলে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। একইভাবে, জাহাঙ্গীরও প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারালে তাকেও শিকলে বাঁধা হয়।

স্থানীয়রা জানায়, আছমা ও জাহাঙ্গীরকে ভাঙাচোরা ঘরের ভেতরে শিকলবন্দী অবস্থায় থাকতে হয়। শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা— সব ঋতুতেই তাদের এই অবস্থায় কাটাতে হয়। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানান, দারিদ্র্যের কারণে তাদের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। এমন অবস্থায় তাদের জীবন কাটছে মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্যে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, এই দুঃখজনক অবস্থার খবর পেয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে আছমা ও জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে তিনি তাদের বর্তমান অবস্থার কথা বিবেচনা করে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা করব।'

এই ঘটনা কটিয়াদী সহ গোটা এলাকায় মানবিক সহানুভূতির জাগরণ ঘটিয়েছে। স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরও এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা নিশ্চিত করছে যে, আছমা ও জাহাঙ্গীর যেন সুস্থ হয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে পারে।

এই ঘটনা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য এবং সমাজসেবা ব্যবস্থার একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরে, যেখানে অনেক পরিবার এখনও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি, দরিদ্রদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রকল্প প্রণয়ন করা উচিত, যাতে তারা আর্থিক অসুবিধার কারণে চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়।

আছমা ও জাহাঙ্গীরের পরিবারের সদস্যরা এখন আশাবাদী যে, সরকারি সহায়তার মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনরা সুস্থ হয়ে উঠবে এবং শিকলমুক্ত জীবন উপভোগ করতে পারবে।

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি