কালাইয়ে নবম শ্রেণির ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর, ছাত্রদের নানারকম হুমকি শিক্ষকের !
স্যার দেরিতে ক্লাসে আসছে একথা ছাত্র বলায় জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একই ক্লাসের ৩৩ জন ছাত্রকে বেধরক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী শিক্ষক নাফসি তালুকদারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে কথা বললেই দেওয়া হয় নানা রকম হুমকি। এঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ওই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়াসহ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ও স্থানীয় সূত্র জানাযায়, জয়পুরহাটের কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাফসি তালুকদার। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় শিক্ষক ফোরামের প্রভাবশালী নেতা। বিগত সময় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন তিনি। সেই প্রভাব খাটান স্কুলসহ সব জায়গাতে। অভিযোগ রয়েছে, সময়মতো তিনি স্কুলে আসেননা। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই দেওয়া হয় নানা রকম হুমকি। গত ২৬ আগস্ট বেলা পৌনে ১১টার দিকে ক্লাসে আসার সময় এক ছাত্র বলেন, স্যার দেরিতে ক্লাসে এসেছে। এ কথা শোনা মাত্রই নবম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্রকে প্রথমে হাত দিয়ে মারধর করার পর পরে বেত এনে মোট ৩৩ জন ছাত্রকে এলোপাথারি মারধর করেন। এতে কয়েক জন ছাত্রের পিঠ ও হাত ফেটে যাওয়ার কারনে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেয় তারা। এ ঘটনায় বিদ্যালয়সহ এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। দ্রুত বিচার চান তারা।
নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে দেরি আসার কথা বলা মাত্রই এসো আমাদের অন্যায় ভাবে মারধর করে। আমাদের পিঠে - হাতে বিভিন্ন জায়গায় কেটে গেছে এবং আমাদেরকে বিভিন্ন রকম হুমকি দিছে ও গালাগালি করেছে এসএসসি পরীক্ষাতে ফেল করে দিবে। কোথাও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কিছুই করতে পারবে না। আমরা নাফসি স্যারের শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক এম এ জি নাফসি তালুকদার বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। একারণে আমার একটু দেরি হয়েছে। নবম শ্রেণীর ক্লাসের শিক্ষার্থীরা আমাকে দেখে বাজে কথা বলছে। একারণে ওই ক্লাসের সব শিক্ষার্থীদের মেরেছি ও করে শাসন করেছি। আমার স্কুলের ছাত্রদের আমি কি মারতে পারবো না। ক্লাসে ঠিকমতো না আসা ও নিয়ম কানুন নামানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার কর্তৃপক্ষ বুঝবেন সে বিষয়ে বলে দ্রুত চলে যান।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল বলেন, সোয়া দশটায় বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হয়। সহকারী শিক্ষক নাফসি তালুকদারের সপ্তম শ্রেণিতে পাঠদান ছিল। নাফসি তালুকদার প্রায় আধা ঘন্টা দেরিতে দশটা ৪০ মিনিটে সপ্তম শ্রেণির কক্ষে যাচ্ছিলেন। এ সময় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তাঁকে দেখে বলে, স্যার আজকেও দেরিতে শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। নাফসি তালুকদার এ কথা শোনার পর সপ্তম শ্রেণিতে না গিয়ে ফিরে নবম শ্রেণিতে এসে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেছেন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক আরো বলেন সে স্কুলেন নিয়ম কানুন মানেন না। বলা যায় সে অনিয়মিত তার মত করে সে চলেন। তাকে আমরা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে কিন্তু তিনি কোন কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। বিভিন্ন মারফত শুনতে পাই সে হুমকি ধামকিও দিচ্ছে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন,‘শিক্ষার্থীদের মারপিট করেছে গতকাল আইন-শৃঙ্খলা মিটিং চলাকালীন সময়ে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে স্কুলের শিক্ষক নাসিত তালুকদার তাদেরকে এলোপাথাড়ি মারধরের অভিযোগ করেন । মিটিং এ উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সিদ্ধান্ত ক্রমে সেখানে ওই শিক্ষককে শোকজ করার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শোকজ দেয়া হয়েছে শোকজেরর জবাব পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।