close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

জুলাই ঘোষণাপত্র যাদের দাবি ছিল, তারা বেড়াতে গিয়েছিল কক্সবাজার: মাসুদ কামাল..

Jewel Azzam avatar   
Jewel Azzam
Senior journalist Masud Kamal claims those demanding the July Declaration were vacationing in Cox’s Bazar during the movement. He calls the declaration crucial yet delayed, and criticizes the absence ..

জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে যারা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন, আন্দোলনের সময়ে তারাই ভ্রমণে গিয়েছিলেন কক্সবাজার—বিস্ফোরক দাবি করলেন সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, এই ঘোষণাপত্রটি সরকারের জন্য দেরিতে হলেও একটি অর্জন, তবে আন্দোলনের নেতাদের অনুপস্থিতি হতাশাজনক।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, রাষ্ট্রীয় বৈধতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্টদের আতঙ্কে দিন কাটাতে হতে পারে। তাঁর মতে, এই কারণে ঘোষণাপত্রটি একটি অপরিহার্য দলিল, এবং সরকার চাইলে অনেক আগেই এটি প্রকাশ করতে পারত।

মাসুদ কামাল বলেন, গত জুলাইয়ে ছাত্রদের আন্দোলন যখন জোরালো ছিল, তখন থেকেই এই ঘোষণার দাবি উঠেছিল। এমনকি এনসিপি (ন্যাশনাল কনসেনসাস প্ল্যাটফর্ম) আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হওয়ার আগেই ছাত্রদের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল—৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি ঘোষণাপত্র না আসে, তারা নিজেরাই তা প্রকাশ করবে। সরকার তখন ১৫ দিনের একটি সময়সীমা দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা দিতে সাত মাস সময় লেগে যায়। এই দেরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যে কাজ ১৫ দিনে করা যায়, তা সাত মাসে করা সরকারের নন-সিরিয়াস মনোভাবের পরিচয়।”

তিনি আরও বলেন, ঘোষণাপত্রটি কোন জটিল বিষয় ছিল না, শুধু রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত করতে কিছু শব্দচয়ন পরিবর্তন করা হয়েছে। এত দীর্ঘ সময় নেওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন, দেরিতে হলেও এই ঘোষণা সরকারের একটি বড় অর্জন, কারণ এতে সব রাজনৈতিক দলকে এক প্ল্যাটফর্মে আনা সম্ভব হয়েছে, যা আগের কোনো সরকার করতে পারেনি।

তবে এখানেই শেষ নয়—মাসুদ কামাল কঠোর সমালোচনায় বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি এই ঘোষণাপত্রের দাবি তুলেছিলেন, তাদের অনেকে সেই সময়ে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “ঘোষণাপত্র প্রকাশের অনুষ্ঠানে হাসনাত আব্দুল্লাহর অনুপস্থিতি আমাকে খুব হতাশ করেছে।

তিনি বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, অতীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবিধানের কিছু ধারা অপরিবর্তনীয় ঘোষণা করলেও বাস্তবে তা মানা হয়নি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটি শিক্ষিকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দেয়ালে থাকা সত্ত্বেও শাস্তি পেয়েছেন, যা সংবিধান ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দেয়।

এছাড়াও মাসুদ কামাল ১৯৭৫ সালের দুঃখজনক ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনিরা প্রথমে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে ‘হিরো’ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ের সরকারগুলো তাদের বিচার না করে উপেক্ষা করে গেছে। কিন্তু জনসম্পৃক্ততা না থাকায় তারা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি ও জামায়াতের মতো দলগুলোর প্রতি সরকারের দমননীতির পরও তারা বিলুপ্ত হয়নি, কারণ তাদের একটা জনভিত্তি রয়েছে। তার ভাষায়, “যে দলে জনগণের শক্তি আছে, তাকে মুছে ফেলা কঠিন।” তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে বিএনপিকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘জঙ্গি-সম্পৃক্ত’ বলে প্রচার করলেও দলটিকে বিলুপ্ত করতে পারেনি। একইভাবে জামায়াতকেও পূর্ণ নিষিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি

সবমিলিয়ে মাসুদ কামালের এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গৃহীত কোনো উদ্যোগ যদি সময়মতো না নেওয়া হয়, তবে তার পরিণতি ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ হতে পারে। ঘোষণাপত্রকে ‘এক ধরনের স্বাধীনতার দলিল’ বলে আখ্যায়িত করে তিনি এর গুরুত্ব নতুনভাবে সামনে এনেছেন। তবে ছাত্রদের নেতৃত্ব ও সংগঠনের কিছু নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

No comments found