সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে জীবন বাঁচাতে যারা পার্শ্ববর্তী দেশ চাদে আশ্রয় নিয়েছেন, সেইসব নারীদের জীবন যেন এক দুঃস্বপ্ন থেকে আরেক দুঃস্বপ্নে প্রবেশ করেছে। সুদানে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) সদস্যদের দ্বারা ধর্ষণ এবং গণধর্ষণের মতো পাশবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর, চাদের শরণার্থী শিবিরে এসেও তারা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং অন্য শরণার্থীদের দ্বারা হচ্ছেন যৌন নিপীড়নের শিকার। আল জাজিরার এক দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলের নারীদের অবর্ণনীয় দুর্দশার এক করুণ চিত্র।
প্রতিবেদনে ‘ইসলাম’ নামের এক নারীর জবানবন্দি তুলে ধরা হয়েছে, যাকে তার বাড়ি থেকে আরএসএফ সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং দুই দিন ধরে বারবার ধর্ষণ করে। ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতা থেকে পালিয়ে চাদের আদ্রে শহরের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিলেও, তার দুঃস্বপ্নের শেষ হয়নি। সেখানে তিনি চাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা আবারও ধর্ষণের শিকার হন। আরেক নারী, ‘রুয়া’, তার স্কুলের বান্ধবীদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের দ্বারা অপহৃত হয়েছিলেন। তাদের সকলকেই ধর্ষণ করা হয় এবং তার দুই বান্ধবী এই পাশবিক নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন। রুয়া পালিয়ে চাদে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে একজন চাদিয়ান পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। এমনকি, শরণার্থী শিবিরে তিন বছরের একটি শিশুও তার প্রতিবেশীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
চাদের আদ্রে শহরের শরণার্থী শিবিরগুলোর অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয়। মাত্র ৪০ হাজার মানুষের একটি সীমান্ত শহরে এখন প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে, যার ফলে শিবিরগুলো হয়ে পড়েছে জনাকীর্ণ। এখানে পর্যাপ্ত জল, আশ্রয় এবং মানবিক ত্রাণের অভাব রয়েছে। শরণার্থীর আগমনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, যা স্থানীয়দের সঙ্গে শরণার্থীদের উত্তেজনা এবং অপরাধ প্রবণতা বাড়িয়ে তুলছে। নারীরা সেখানে প্রতিনিয়ত ডাকাতি এবং যৌন হামলার ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছেন।
এই অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শরণার্থীদের জীবনে এক দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত তৈরি করেছে। ধর্ষণের শিকার ইসলাম এখন ক্রনিক অ্যাজমায় ভুগছেন এবং রুয়ার মতো অনেকেই মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছেন যে, তারা খাওয়া-ঘুম ছেড়ে দিয়েছেন এবং বাইরের জগতের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। ধর্ষণের কারণে সৃষ্ট লজ্জা এবং পারিবারিক বিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেক নারী আবার সুদানের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে পালিয়ে এসে শরণার্থী শিবিরের এই নতুন দুঃস্বপ্ন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রতিনিয়ত কমতে থাকা মানবিক সহায়তা—এই সবকিছু মিলিয়ে সুদানের নারীদের জীবন এক অন্তহীন যন্ত্রণা ও ভয়ের বৃত্তে আটকে গেছে। স্থিতিশীল ও নিরাপদ জীবনের আশা হারিয়ে ফেলাটাই যেন তাদের জন্য আরেক নতুন আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে।