close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

যশোরের ভবদহে জলাবদ্ধতার সংকট' ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে"

Nurullah Al Mamun avatar   
Nurullah Al Mamun
ভবদহে জলাবদ্ধতার সংকট প্রকট করছে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের.
মোঃ নুরুল্লাহ (অভয়নগর, যশোর) প্রতিনিধি :..
যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল।এক সময় সে জমিতে সব ধরনের ফসলই ফলত। কিন্তু জমির আশপাশে একের পর এক মাছের ঘের তৈরি করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সে জমি সারা বছরই থাকে জলাবদ্ধ। ফসল না ফলায় নিজের জমি থাকতেও এখন সংসার চালাতে পরের জমিতে চাষ করতে হচ্ছে তার।
স্থানীয়রা বলছেন, ভবদহ এলাকায় মূলত দুই দশক আগে শুরু হয় মাছের ঘের। পানির সহজলভ্যতায় দিনের পর দিন বাড়ছে অপরিকল্পিত মাছের ঘের। ঘের স্থাপনে নীতিমালা থাকলেও মানছে না কেউ। ফলে বর্ষায় ঘের এলাকা প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।  সংশ্লিষ্টরা জানান, ভবদহ এলাকায় অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল রয়েছে। বিলের ভেতর দিয়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, হরি ও শ্রী নদ-নদী প্রবাহিত। এগুলোর জোয়ার-ভাটার সঙ্গে বিলের পানি ওঠানামা করে। জলাবদ্ধতা নিরসন করে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য ঘের স্থাপন; সরকারি খাল, নদী ও জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার করে খাল ও নদ-নদীর নাব্য বাড়ার জন্য ২০১৯ সালে মৎস্য ঘের স্থাপন নীতিমালা প্রণয়ন করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কোনো ঘের মালিকই নীতিমালার তোয়াক্কা করেননি। দুই ঘেরের মাঝে আড়াই ফুট করে মোট পাঁচ ফুট জায়গা পানি নিষ্কাশনের জন্য ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও কেউই ঘেরে জায়গা রাখেননি। ফলে বছরের পর নিজেদের কৃত্রিম সংকটে নিজেরাই ডুবছে।  অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা এলাকার শিক্ষক শিব পদ বিশ্বাস বলেন, ‘মূলত ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতার জন্য অপরিকল্পিত ঘেরই দায়ী। কারণটা হচ্ছে, যখন পাশাপাশি দুটি ঘের তৈরির পর একটি ঘেরের পাশে পানিপ্রবাহের জন্য জায়গা রাখা হচ্ছে না। দুটি ঘেরের মধ্যে যদি সঠিক জায়গা রাখা হতো, তাহলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না।’  বিল কেদারিয়ায় সাড়ে ৯৩ হেক্টর জমি ইজারা নিয়ে মাছের ঘের করেছেন পরেশ চন্দ্র মণ্ডল। তিনি এখনো ঘেরের নিবন্ধন করেননি। এ ব্যাপারে পরেশ চন্দ্র বলেন, ‘ফসল হয় না বলেই ঘের তৈরি করেছিলাম। ঘেরের নিবন্ধন করার বিষয়ে আমি জানি না। মৎস্য অফিসে নিবন্ধনের ব্যাপারে খোঁজ নেব।’  ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলরাও অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন না। এজন্য ভবদহের জলাবদ্ধতার সংকট আরো প্রকট হয়েছে। অপরিকল্পিত ঘের বন্ধ করতে হবে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টিআরএম চালু করতে হবে।’  ২০১৯ সালে মৎস্য ঘের স্থাপন নীতিমালায় বলা হয়, ঘের করতে হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। কেউ নীতিমালা ভঙ্গ করলে নিবন্ধন কর্মকর্তা তার নিবন্ধন বাতিল করবেন। সরকারি খাল, সরকারি জমি, নদীর পাড় ও নদীর মধ্যে ঘের স্থাপন করা যাবে না। নদী, খাল ও খাসজমি ইজারা নিয়ে করা ঘেরের ইজারা বাতিল ও ঘের অপসারণ করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ঘেরের আয়তন হবে সর্বোচ্চ ১৫ হেক্টর, সমবায় সমিতির ক্ষেত্রে ৫০ হেক্টর। ঘের মালিক ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ বা পাড় দেবেন, বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে বাঁধের উচ্চতা রাস্তার থেকে কম হবে। পানি নিষ্কাশনের সুবিধার্থে প্রত্যেক মালিককে ঘেরের বাঁধের বাইরে কমপক্ষে আড়াই ফুট করে জায়গা ছাড়তে হবে। উভয় ঘেরের পাড়ের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য অন্তত পাঁচ ফুট জায়গা থাকবে। সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধকে ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।  তবে মৎস্য বিভাগের তথ্য বলছে, ভবদহ এলাকায় ১২ হাজার ৯৮৬ হেক্টর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ২৪০টি মাছের ঘের তৈরি করা হয়েছে। তবে নিবন্ধন রয়েছে ৩২টি ঘেরের।  এ প্রসঙ্গে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ঘের। এ বিষয়ে মৎস্য বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। জলাবদ্ধতা দূর করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’  সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এ সমস্যা যতটা না প্রাকৃতিক, তার চেয়ে বেশি মনুষ্য সৃষ্টি। দীর্ঘদিন এখানে ঘের তৈরির বিষয়ে নীতিমালা ছিল না। সম্প্রতি একটি নীতিমালা হয়েছে। সে অনুযায়ী ঘের তৈরি করতে হবে। লাইসেন্সও নিতে হবে। সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৎস্য কর্মকর্তাদের এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
No comments found