শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:
বিএমজেড অর্থায়নে পরিচালিত ম্যাপ-সিডিআরএফআই প্রকল্পের আওতায়, অ্যাওসেড ও কেয়ার বাংলাদেশ যৌথভাবে সাতক্ষীরায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছে। বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে সাতক্ষীরা কেন্দ্রিয় পাবলিক লাইব্রেরির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় জলবায়ু দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন ও বীমা সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় অঞ্চলের তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের অভিজ্ঞতা ও সুপারিশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা।
সাতক্ষীরা জেলা ম্যাপের যুগ্ম আহবায়ক মাধব চন্দ্র দত্ত সভার সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এডিশনাল ডেপুটি ডাইরেক্টর মোঃ জামাল উদ্দিন। সভায় সঞ্চালনা করেন জেলা ম্যাপের সদস্য সচিব শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন।
সভায় অ্যাওসেডের লার্নিং ও অ্যাডভোকেসি অফিসার বাহলুল আলম উপকূলীয় বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বহুমাত্রিক সংকট ও প্রাসঙ্গিক বিশ্লেষণ বিষয়ক পেপার উপস্থাপন করেন। এতে উল্লেখ করা হয় যে, Germanwatch-এর Global Climate Risk Index অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশ্বের জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে ৭ম স্থানে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার বিস্তার, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত, নদীভাঙন ও ঘনঘন দুর্যোগের কারণে জীবন, জীবিকা ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Centre for Climate Justice, CARE ও AOSED (২০২৪) অনুসারে উপকূলীয় জনগণের ৭০.২% ঘরবাড়ি, ফসল, গবাদিপশু ও পানির উৎসে ক্ষতি ভোগ করছে। সাতক্ষীরায় ৪১,৭৮৮ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৮,৩৪০ হেক্টর ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রায় ৫০,০০০ মানুষ পানিবন্দি। বাগেরহাটে চিংড়ি ঘের, ধানক্ষেত ও শাকসবজি চাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
IPCC ৬ষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চরম বৃষ্টিপাত ও সামুদ্রিক ঝড় আগামী দশকে আরও বৃদ্ধি পাবে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১.৫২ কোটি মানুষ ২০৫০ সালের মধ্যে বসতবাড়ি হারাতে পারে, যাদের একটি বড় অংশ শহরমুখী হয়ে দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকিতে পড়বে। শরণখোলা উপজেলায় মিঠা পানির সংকট এবং লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে নারী ও শিশুরা দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করে পানি সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খুলনা বিভাগীয় MAP-এর যুগ্ম আহবায়ক শিরিনা বেগম, AOSED-এর হেড অব প্রোগ্রাম ও অপারেশন্স শংকর রঞ্জন সরকার, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ।
এই সভার মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরা হয়েছে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও সুপারিশগুলিকে যথাযথ নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস ব্যক্ত করা হয়েছে।