বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নাটকীয় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা একদিন স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়ে সংবিধান থেকে বাতিল করেছিল আওয়ামী লীগ, আজ সেই ব্যবস্থার অধীনেই নির্বাচনে ফেরার কথা বলছেন দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে, জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের।
একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে সফলতা পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু ২০১১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালীন বিচারপতি খায়রুল হককে ব্যবহার করে আদালতের এক বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয় শেখ হাসিনার সরকার। তৎকালীন সময়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজ্ঞ এবং সুশীল সমাজের বড় একটি অংশ এই ব্যবস্থার পক্ষে মত দিলেও, তা উপেক্ষা করা হয়।
এক ভিডিও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলোতে "মাফিয়া স্টাইলে" ভোট কারচুপি এবং বিরোধী দল বিএনপিকে ছাড়া একতরফা নির্বাচনের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। যদি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল থাকতো, তবে আওয়ামী লীগকে হয়তো এই ধরনের অভিযোগের সম্মুখীন হতে হতো না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যে ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় টিকে ছিল, আজ সেই ব্যবস্থার অনুপস্থিতিই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটি এখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ খুঁজছে এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা এখন সেই বাতিল করা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার অধীনেই একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা এবং তার দল হয়তো একটি গণ-অভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত এবং সে কারণেই তারা আবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফিরতে চাইছেন। তবে বর্তমান সরকার এবং আন্তর্জাতিক মহল আসন্ন নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দলের অংশগ্রহণের বিষয়ে কতটা আগ্রহী, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
রাজনীতির এই নাটকীয় মোড়কে পর্যবেক্ষকরা "সময়ের নির্মম পরিহাস" বলে অভিহিত করছেন। যে সিদ্ধান্তের কারণে একদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছিল, আজ সেই সিদ্ধান্তই তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের রাজনীতি কোন দিকে মোড় নেয়।